নির্যাতনের অভিযোগ

সিমলাপালে উদ্ধার ছয় প্রতিবন্ধী

জেলা প্রশাসন ও চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীলের কাছে ফোন আসে, বেতঝারিয়া এলাকার বাসিন্দা গুরুপদ বাগ তাঁর বাড়িতে এক নাবালককে আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছেন। খবর পেয়েই সজলবাবু সিমলাপাল থানার পুলিশকে নিয়ে গুরুপদবাবুর বাড়িতে যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিমলাপাল শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০৩:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটের দেখা পাওয়া। অভিযোগ এসেছিল, বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া এক প্রতিবন্ধী নাবালকের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেই অভিযোগের তদন্তে গিয়ে চাইল্ড লাইনের বাঁকুড়ার কর্তারা গিয়ে দেখেন, প্রশাসনের অনুমতির তোয়াক্কা না করে বেসরকারি সংস্থার নাম করে কয়েকটি প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েকে বাড়িতে রেখে দিয়েছেন দুই ব্যক্তি। সিমলাপালের বেতঝরিয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয় দুই নাবালক, এক যুবতী-সহ তিন যুবককে। উদ্ধার হওয়া যুবতী ও দুই নাবালককে হোমে পাঠানো হয়।

Advertisement

জেলা প্রশাসন ও চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীলের কাছে ফোন আসে, বেতঝারিয়া এলাকার বাসিন্দা গুরুপদ বাগ তাঁর বাড়িতে এক নাবালককে আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছেন। খবর পেয়েই সজলবাবু সিমলাপাল থানার পুলিশকে নিয়ে গুরুপদবাবুর বাড়িতে যান। সেখানে বছর আটের ওই নাবালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, গুরুপদবাবুর বাড়িতেই বছর চব্বিশের এক যুবতী ও তিন যুবকও রয়েছেন। সকলেই মানসিক প্রতিবন্ধী। অনেকে আবার দৃষ্টিহীন। এ ছাড়া গুরুপদবাবুর বন্ধু রঞ্জিত মাহাতোর বাড়িতেও একটি বছর এগারোর মূক ও বধির নাবালক রয়েছে। চাইল্ড লাইন ও পুলিশ কর্মীরা ওই ছ’জনকে উদ্ধার করেন।

সজলবাবুর দাবি, গুরুপদবাবু তাঁর বাড়ির উঠোনে একটি ছোট্ট ঘরে বছর আটেকের ওই নাবালক, যুবতী-সহ তিন জনকে রাখতেন। রাতেই ওই যুবতী ও দুই নাবালককে নিয়ে বাঁকুড়া রওনা দেয় চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা। বাকি তিন ব্যক্তিকে গুরুপদবাবুর দায়িত্বেই তাঁর বাড়িতে রেখে দেওয়া হয়। শনিবার ওই যুবতীকে খাতড়া মহকুমাশাসকের দফতরে এবং ওই দুই নাবালককে বাঁকুড়া শিশু কল্যাণ কমিটির সামনে হাজির করানো হয়। পরে ওই যুবতীকে বিষ্ণুপুরের একটি হোমে এবং দুই নাবালককে বাঁকুড়ার একটি হোমে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

বাঁকুড়ার সমাজ কল্যাণ আধিকারিক সুরেন্দ্রপ্রসাদ ভকত বলেন, “ওই ছ’জনকে রাখার জন্য দুই ব্যক্তি নিয়ম মানেননি। পুরো ঘটনাটি নিয়ে আমরা বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।” এ দিন গুরুপদবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। রঞ্জিতবাবু দাবি করেছেন, “আমি ও গুরুপদ কলকাতায় শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করি। সেখানে একটি হোমেই এই ছ’জন ছিল। সম্প্রতি হোমে ছুটি পড়েছে। ওই দু’ই নাবালক আমাদের সঙ্গে বেড়াতে এসেছে। ওই যুবতী ও তিন ব্যক্তিকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসা করানোর জন্য আনা হয়েছে।”

সুরেন্দ্রপ্রসাদবাবু অবশ্য বলেন, “যে বেসরকারি সংস্থায় ওই ব্যক্তিরা কাজ করেন বলে জানাচ্ছেন, তার সপক্ষে কোনও উপযুক্ত নথি তাঁরা দেখাতে পারেননি। এমনকী, ওই নাবালকেরাও যে ওই সংস্থা থেকেই এসেছে, তারও যোগ্য প্রমাণ আমরা পাইনি।” তবে ঘটনার সত্যাসত্য জানতে শীঘ্রই ওই সংস্থার সঙ্গেও বাঁকুড়ার প্রশাসন যোগাযোগ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সজলবাবু বলেন, “ওই নাবালকদের কাউন্সেলিং করে এখনও বিশেষ কিছু জানতে পারিনি আমরা। শীঘ্রই ফের কাউন্সেলিং করা হবে।” পুরো ঘটনাটির বিস্তারিত রিপোর্ট চাইল্ড লাইন জেলা প্রশাসনকে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement