পুরুলিয়া স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
প্রজাতন্ত্র দিবসে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে পুলিশ নজরদারি বাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে অন্য এলাকাতেও শনিবার থেকে শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় চলছে তল্লাশি অভিযান। বাঁকুড়াতেও নামানো হয়েছে বাড়তি আড়াই হাজার পুলিশকর্মীকে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে রাতের টহলের গাড়িও।
বেশ কয়েক বছর দুই জেলায় মাওবাদী নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পুরুলিয়া জেলার তিন দিকেই ঝাড়খণ্ড। সে রাজ্যের কিছু এলাকায় মাওবাদীদের তৎপরতা এখনও রয়েছে। পুরুলিয়া জেলা গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের দলমা রেঞ্জে মাওবাদীদের গতিবিধি রয়েছে। সেখান থেকে পুরুলিয়া জেলার সীমানা খুব দূরে নয়। সে কারণে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে প্রজাতন্ত্র দিসব উপলক্ষে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলমা রেঞ্জে ন’টি দল তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। দলে জেলা পুলিশের সঙ্গে ঝাড়খণ্ড পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীও রয়েছে। আন্তঃরাজ্য এই অভিযানকে ‘এ লেভেল অপারেশন’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, এক সময় মাওবাদীদের ‘মুক্তাঞ্চল’ বলে পরিচিত হয়ে ওঠা অযোধ্যাপাহাড়েও একই ভাবে অভিযান চলছে। এই অভিযানে জেলা পুলিশের ছ’টি দল রয়েছে। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বি লেভেল অপারেশন’। জঙ্গলমহলের থানাগুলির বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, রাস্তারমোড়েও তল্লাশি চলছে।
পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান বলেন, ‘‘জঙ্গলমহল-সহ সারা জেলাতেই নজরদারি চলছে। জঙ্গলমহলে এরিয়া ডমিনেশন চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া, রাতেও টহলদারি চলছে গোটা জেলাতেই। প্রতিটি থানা এলাকায় দু’টি করে মোবাইল ভ্যান টহলদারিতে রয়েছে।’’ পুরুলিয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) ধৃতিমান সরকার জানান, শনিবার থেকেই জঙ্গলমহলের সর্বত্র নজরদারি চলছে। সব রকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।
বাঁকুড়ার জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও জানান, বাড়তি আড়াই হাজার পুলিশের একটা বড় অংশকে ইতিমধ্যেই জেলার ২৪টি থানা-সহ জঙ্গলমহলের রাইপুর, বারিকুল ও সারেঙ্গার পুলিশ ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে জেলার সীমানা এলাকায় মোট ২৩টি পয়েন্টে ‘নাকা চেকিং’ও শুরু হয়ে গিয়েছে। শনিবার থেকেই জেলা জুড়ে পুলিশের টহলদারি গাড়ির সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। সাধারণত পুলিশের ৩০টি টহলদারি গাড়ি রাতে জেলার বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন থাকে। তবে প্রজাতন্ত্র দিবসের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে অতিরিক্ত আরও ১৫টি টহলদারি গাড়ি নামানো হচ্ছে। জেলার বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন লাগোয়া এলাকা-সহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের বাড়তি নজর থাকবে বলে পুলিশ সুপার জানান। তিনি বলেন, ‘‘প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে জেলা জুড়েই আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জঙ্গলমহল-সহ গোটা জেলা জুড়েই আমরা কড়া নজরদারি চালাচ্ছি।”
অন্য বারের মতো এ বারেও রেলস্টেশন, রেললাইন, বাসস্ট্যান্ড প্রভৃতি জায়গায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, আদ্রা, পুরুলিয়া-সহ বিভিন্ন স্টেশনে ও ট্রেনে এ দিন থেকেই রেল রক্ষী বাহিনী (আরপিএফ) ও রেল পুলিশ (জিআরপি) তল্লাশি শুরু করেছে। আরপিএফ এবং জিআরপির তরফে শনিবারই কুকুর নিয়ে স্টেশনে তল্লাশি চালানো হয়। যাত্রীদের ব্যাগ বা শরীরে সন্দেহজনক কিছু লুকিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কি না, তা-ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। নজর রাখা হচ্ছে সিসি (ক্লোজ়ড সার্কিট) ক্যামেরার মাধ্যমেও।