শাসকদলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ, আক্রান্ত পুলিশ

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে জখম হলেন তিন পুলিশকর্মী-সহ মোট ১৮ জন। ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার বাঁকুড়ার জয়পুর থানার যাদবনগর-হাতবাড়ি এলাকার ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়পুর শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৮
Share:

বিষ্ণুপুর আদালতের পথে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে জখম হলেন তিন পুলিশকর্মী-সহ মোট ১৮ জন। ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার বাঁকুড়ার জয়পুর থানার যাদবনগর-হাতবাড়ি এলাকার ঘটনা।

Advertisement

এলাকা দখল নিয়ে সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। দু’পক্ষের ১৫ জন জখম হন। খবর পেয়ে জয়পুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। অভিযোগ, পুলিশের দিকেও ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়পুর ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতি তথা জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বাবর আলি কোটালের সঙ্গে একই এলাকার বাসিন্দা দলের হরিণাসুলি বুথ কমিটির প্রাক্তন সভাপতি কাজল ভুঁইয়ার মধ্যে ঝামেলা দীর্ঘ দিনের। বাবর মঙ্গলবার বলেন, ‘‘কাজল গত বিধানসভা নির্বাচনে জোট প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছিল। সোমবার হঠাৎ এলাকার কিছু লোকজন নিয়ে মিছিল করে আমাদের পার্টি অফিসের দখল নিতে যায়। দলীয় কর্মীরা বাধা দিলে মারামারি শুরু হয়। আমাদের কর্মীরা জখম হয়েছেন।’’ কাজলের পাল্টা দাবি, ‘‘আমরা বাবরের আগে থেকে তৃণমূল করছি। দলের হয়েই শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করছিলাম। বাবরের নির্দেশে আমাদের কর্মীদের উপর হামলা হয়। আমাদের ১১ জনকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি
করাতে হয়েছে।’’

Advertisement

হাসপাতালে আহত পুলিশকর্মী। নিজস্ব চিত্র।

তবে শাসক দলের নেতৃত্ব বিষয়টিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, কাজল ভুঁইয়ার সঙ্গে দলের কোনও যোগাযোগ নেই। তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা কোর কমিটির সদস্য তথা এলাকার বিধায়ক শ্যামল সাঁতরা বলেন, ‘‘কাজল সিপিএম আর বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে। ও এখন আমাদের দলের কেউ নয়।’’ একই দাবি তৃণমূলের জয়পুর ব্লক সভাপতি স্বপন কোলেও। তবে সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি ও বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষের দাবি, কাজল ভুঁইয়ার সঙ্গে তাঁদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল নিজেদের দলের ভিতরের কোন্দল আড়াল করতেই এই কথা বলছে বলে তাঁরা পাল্টা দাবি করেছেন।

এসডিপিও(বিষ্ণুপুর) লাল্টু হালদার জানান, খবর পেয়ে হামলা থামাতে গিয়ে তিন পুলিশ কর্মী ইটের আঘাতে জখম হয়েছেন। তাঁদের বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ৬ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে।’’ ধৃতদের এ দিন আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। স্থানীয় সূত্রের দাবি, গ্রেফতার হওয়া ৬ জন এলাকায় বাবর গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত।

এদিন বিষ্ণুপুর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, সংঘর্ষে জখম এবং সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত পুলিশ কর্মীরা ভর্তি রয়েছেন সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে। হাতে-মাথায়-পিঠে ব্যান্ডেজ নিয়ে বেডে শুয়ে রয়েছেন ১৮ জন। হাতবাড়ি এলাকার বাসিন্দা খেলাপত খাঁ বলেন, ‘‘আমরা অনেক দিন ধরে কাজলের সঙ্গে তৃণমূল করে আসছি। সোমবার ছেলের দোকানে হামলা চালায় বাবরের লোকজন। খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। আমাকেও রড দিয়ে মারে।’’ পুলিশ কর্মী সমীর মাহাতো বলেন, ‘‘ঝামেলা থামাতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ একটা ইট এসে মাথায় লাগল।’’

হাসপাতাল সুপার পৃথ্বীশ আকুলি জানান, ‘‘তিন পুলিশ কর্মী-সহ মোট ১৮ জন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ জনকে বাঁকুড়ায় রেফার করা হয়েছে। বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement