আদালত থেকে সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে। নিজস্ব চিত্র
বিষ্ণুপুর পুরসভার টেন্ডার-কাণ্ডে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বিপুল পরিমাণ সোনাদানার হদিশ পেল বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। শনিবার শ্যামাপ্রসাদের ঘনিষ্ঠ রামশঙ্কর মহান্তির বাড়িতে হানা দিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রীর নামে কেনা চারটি জমির দলিল, ডাকঘরের সেভিংস পাশবুক এবং নগদ প্রায় ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছিল পুলিশ। এ বার সেই রামশঙ্করের নামে ব্যাঙ্কে ভাড়া করা লকারে অলঙ্কার ভান্ডারের খোঁজ পেলেন তদন্তকারীরা। শ্যামাপ্রসাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ভোটের সময় লাখ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। সব মিলিয়ে যত সময় গড়াচ্ছে, ততই ‘কর্তাবাবু’র সম্পত্তির পরিমাণ আরও বেশি করে নজরে আসছে তদন্তকারীদের। সেই ‘গুপ্তধনের বহর কতটা, তারই আঁচ পেতে চাইছে বাঁকুড়া পুলিশ।
পুলিশের দাবি, জেরার মুখে রামশঙ্কর স্বীকার করে নিয়েছেন, ওই অলঙ্কার আসলে শ্যামাপ্রসাদেরই। ওই লকারে বিপুল পরিমাণ সোনা এবং রুপোর গয়না আছে বলেও জেরায় জানিয়েছেন তিনি।তদন্তকারীরা মনে করছেন, রামশঙ্করের নামে লকার ভাড়া করে সেখানে ‘নিরাপদ’ জায়গায় গয়না রেখেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। কতটা সোনাদানা ওই লকারে রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ নিয়ে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘ওই লকারে ঠিক কত পরিমাণ অলঙ্কার রয়েছে এবং তার বাজারমূল্য কী, তা আমরা জানার চেষ্টা করছি। আপাতত ওই লকার ব্যবহার বন্ধ রাখার জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রামশঙ্করকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শ্যামাপ্রসাদের নামে এবং বেনামে আর সম্পত্তি আছে কি না, তার খোঁজ চলছে।’’
প্রাক্তন মন্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের বিশদ তথ্য অবাক করেছে তদন্তকারীদের। জানা গিয়েছে, শ্যমাপ্রসাদের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে সর্বনিম্ন ২০ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ লক্ষ টাকা জমা করা হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে একাধিকবার তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। তদন্তকারীদের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে শ্যামাপ্রসাদের অ্যাকাউন্টে ২০ লক্ষ টাকা জমা পড়ার প্রমাণ মিলেছে। শ্যামাপ্রসাদের অ্যাকাউন্টগুলিতে প্রতিটি লেনদেন হয়েছে নগদে। এই বিপুল পরিমাণ নগদ টাকার উৎস কী, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
শ্যামাপ্রসাদের দ্বিতীয় দফার পুলিশ হেফাজতের সময়সীমা শেষ হওয়ায় রবিবার ফের তাঁকে আদালতে পেশ করে পুলিশ। শনিবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। রবিবার হাসপাতাল থেকে সরাসরি তাঁকে আদালতে তোলা হয়। তদন্তকারীরা আর প্রাক্তন মন্ত্রীকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাননি। অবশ্য আদালতে শ্যামাপ্রসাদের আইনজীবী তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক তা নাকচ করে তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন। অভিযুক্তকে ফের ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে তোলা হবে।