প্রতীকী চিত্র।
‘ডিলিট হয়ে গিয়েছে’। খুনের পরে, ফোনে নিহতের স্ত্রী-কে এমনই বলেছিল আততায়ীদের এক জন— দাবি পুলিশ সূত্রের। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের ধটাড়া গ্রামের বাসিন্দা কামাল আনসারির (৩০) ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছিল সোমবার সন্ধ্যায়, নিতুড়িয়ার মুরগাবনি এলাকার পরিত্যক্ত কয়লা খাদান থেকে। তিন দিনের মধ্যে ঘটনার কিনারা হয়েছে বলে দাবি করল নিতুড়িয়া থানার পুলিশ।
খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেফতার করা হয়েছে নিতুড়িয়া থানার হেড্ডি গ্রামের বাসিন্দা শেখ হাসিমুদ্দিন ও শেখ আলিকে। এ ছাড়া, গ্রেফতার করা হয়েছে সাঁতুড়ি থানার মুরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ আলিম ও নিহত যুবকের স্ত্রী পাড়া থানার হুড়রার বাসিন্দা সালমা বেগমকে। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তদন্তে জানা গিয়েছে, বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্কের জেরেই খুন। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে আরও বিশদে জেরা করা হবে।”
কামালের দেহ উদ্ধারের পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল, পরিচিত এবং একাধিক জন মিলে খুন করেছে। সূত্রের খবর, তদন্ত শুরুর পরেই কামালের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে হেড্ডি গ্রামের হাসিমুদ্দিনের খোঁজ মিলেছিল। পুলিশের দাবি, কামালের স্ত্রী সালমা বেগমের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল হাসিমুদ্দিনের। তার জেরেই খুন।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ঘটনার দিনে মোবাইলে হাসিমুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিল সালমা। খুনের পরে, হাসিমুদ্দিনকে ফোন করেছিল। তখনই হাসিমুদ্দিন বলেছিল, “ডিলিট হয়ে গিয়েছে।’’
তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, কয়েকবছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে সালমার সঙ্গে পরিচয় হয় বিবাহিত হাসিমুদ্দিনের। ক্রমেই তা ঘনিষ্ঠতায় পৌছেয়। মাসখানেক আগে হাসিমুদ্দিন ও সালমা মিলে কামালকে খুনের পরিকল্পনা করে। কামালের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে হাসিমুদ্দিন। পরিকল্পিত ভাবে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। মাঝমধ্যেই রেস্তরাঁয় নিয়ে গিয়ে নিজের খরচে খাওয়াত। পুলিশের দাবি, জেরায় হাসিমুদ্দিন স্বীকার করেছে, এর আগেও দু’বার কামালকে খুনের চেষ্টে করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি।
পুলিশের এক পদস্থ কর্তার দাবি, এ বার আটঘাট বেধেই নেমেছিল হাসিমুদ্দিন। সঙ্গে নিয়েছিল দুই বন্ধু শেখ আলি ও শেখ
আলিমকে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সোমবার সকালে পাড়া থেকে কামালকে মোটরবাইকে নিয়ে তিন জন গিয়েছিল আসানসোলের নিয়ামতপুর এলাকায়। সেখানে রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া সেরে সন্ধ্যায় নিতুড়িয়ার সড়বড়িতে এসে মদ কেনে। তারই মাঝে একটি দোকান থেকে বড় ছুরি কেনে হাসিমুদ্দিন। একটু রাতে মুরগাবনি এলাকায় গিয়ে মদ খেয়ে খুন করে। পরে, পরিত্যক্ত কয়লা খাদানে দেহ ফেলে দিয়েছিল।
পুলিশের দাবি, পরিত্যক্ত কয়লা খাদানে দেহ ফেললে খোঁজ পাওয়া যাবে না ধরে নিয়েছিল ওই তিন জন। কিন্তু পরিকল্পনায় বাধ সাধে বৃষ্টি। জলে খাদান ভরে থাকায় দেহ কিছু পরেই ভেসে উঠেছিল।
এ দিন সালমার বাবা আবদুল সামাদ আনসারি বলেন, ‘‘মেয়ের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের ব্যাপারে আমার কোনও ধারণাই নেই। ও এমন কাজ করতে পারে বলেও আমার মনে হয় না। ঘটনা যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে আমার মনের অবস্থা ঠিক নেই।’’ হাসিমুদ্দিনের আত্মীয় জাহাঙ্গির শেখ বলেন, ‘‘আমরা এ ব্যাপারে
কিছু জানি না।’’