—নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়ায় শিশুপাচার-কাণ্ডে গ্রেফতার বিকাশ গুপ্ত নামে আরও এক ব্যক্তি। ওই পাঁচ শিশুর মা রিয়া বাদ্যকরের সঙ্গে জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কমলকুমার রাজোরিয়া এবং ওই স্কুলের শিক্ষিকা সুষমা শর্মার স্বামী সতীশ ঠাকুরের পরোক্ষে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন বিকাশই। এই বিষয়টি তদন্তে উঠে আসার পরই মঙ্গলবার রাতে তাঁকে দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। বুধবার তাঁকে বাঁকুড়া জেলা আদালতে তোলা হলে আগামী ২ অগস্ট পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
গোটা ঘটনায় তদন্ত যতই এগোচ্ছে, ততই উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সন্তান দত্তক নেওয়ার ঝঞ্ঝাটে না গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকায় একটি বাচ্চা শিশু কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন সুষমা ও তাঁর স্বামী। এই পরিকল্পনায় তাঁদের সাহায্য করেছিলেন দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকার মুদি দোকানদার বিকাশ গুপ্ত। তিনিই ওই এলাকার চা-বিক্রেতা স্বপন দত্তের সঙ্গে কমলকুমার ও সতীশের পরিচয় করিয়ে দেন। তার পর স্বপনই তাঁদের সঙ্গে ওই পাঁচ শিশুর মায়ের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। পরে লেনদেনের সময়েও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন স্বপন। মঙ্গলবার বিকাশ গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, শিশু পাচার-কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত যাঁদের নাম উঠে এসেছে, তাঁদের প্রত্যেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্য দিকে, উদ্ধার হওয়া পাঁচ শিশুকেই জেরায় নিজের সন্তান বলে দাবি করেছেন ধৃত মা রিয়া। কিন্তু তাঁর বর্তমান বয়স এবং পাঁচ সন্তানের মা হওয়ার বিষয়টি মেলাতে পারছেন না তদন্তকারী আধিকারিকরা। তাঁদের বক্তব্য, রিয়ার বয়স মেরেকেটে ২৩ বছর। এই বয়সে পাঁচ সন্তানের মা হওয়া কিছুটা অস্বাভাবিক। এ বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার কথা ভাবছেন তদন্তকারীরা।
বাবা কমলকুমার গ্রেফতার হওয়ার খবর পেয়েই মঙ্গলবার মা-কে নিয়ে অধ্যক্ষের নিজস্ব বাংলোতে হাজির তাঁর একমাত্র ছেলে রাহুল বাজোরিয়া। শিশু পাচারের ঘটনায় বাবা অভিযুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাঁর বাবাকে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা গ্রেফতার হওয়ার পর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। তার পরই তড়িঘড়ি মাকে এখানে নিয়ে আসতে হয়। আমার বাবা অত্যন্ত ভালো মানুষ । মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকেন তিনি। তিনি কী ভাবে এমন কাণ্ডে জড়িয়ে পড়লেন, বুঝতে পারছি না। যে দিন বাবা গ্রেফতার হন, সে দিন দুপুরেও বাবার সঙ্গে আমার টেলিফোনে কথা হয়েছে। বাড়িতে যে দু’টি শিশুকে নিয়ে এসে রেখেছিলেন, সে বিষয়টিও তিনি আমাদের জানাননি। আমার নিশ্চিত ধারণা, বাবাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’