হালখাতা। নিজস্ব চিত্র।
সারা বছরের দেনা-পাওনার হিসেব। চৈত্রের শেষ ক’টা দিন সেই হিসেব নিয়েই ব্যস্ত থাকেন গ্রাম বাংলার ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা। বিনয়ের সঙ্গে সেই হিসেব মেটানোর আর্জি নিয়ে ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে যায় গণেশের ছবি দেওয়া হালখাতার চিঠি। বাংলা বর্ষবরণের প্রস্তুতির জানান দেয় সেই চিঠি। গত দু’বছর কোভিড আতঙ্ক, লকডাউনের কড়াকড়িতে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সুযোগই ছিল না। হালখাতার চিঠিও পৌঁছয়নি ক্রেতাদের কাছে। এ বার কোভিড আতঙ্ক কমেছে। চেনা ছন্দে ফিরেছে জীবন। জেলা জুড়ে বর্ষবরণের প্রস্তুতির জানান দিয়ে হাজির হালখাতার চিঠিও।
জেলার ছোট বড় ব্যবসায়ীরাও বলছেন, প্রথমে গণেশ পুজো। তারপর শেষে লাল কাপড়ে জড়ানো হালখাতায় সিঁদুর মাখানো টাকার ছাপ দেওয়ার মাধ্যমে নতুন বছরের সূচনা হত। গত দু’বছর কোনও রকমে পুজোটুকু হলেও উৎসবের সুর বিষাদ ঠেকেছিল। কিন্তু এ বার ভাল ভাবেই হালখাতা করতে চান ব্যবসায়ীরা। প্রস্তুতিও মোটের উপরে সারা।
দুবরাজপুরের একটি বড় মুদিখানা দোকানের মালিক রাজু দত্তমুদি বলছেন, ‘‘প্রথম বছর তো লকডাউনে কোনও রকমে গণেশ পুজোটুকু করেছিলাম। গত বার পুজো হলেও ক্রেতাদের ডাকতে পারিনি। এ বার সেই বাধা নেই। ভাল ভাবেই পালিত হবে হালখাতা। মিষ্টি, ক্যালেন্ডার তৈরি।’’ একই বক্তব্য রামপুরহাটের ব্যবসায়ী পিন্টু চট্টোপাধ্যায়ের এবং বোলপুরের বৈদ্যনাথ পালের। বৈদ্যনাথবাবুর কথায়, ‘‘বছরের এই দিনটিতে অনেক ধার পরিষোধ হয়। দু’বছর পর ফের সেই সুযোগ পেলাম।’’
সিউড়ির পিতল কাঁসার বাসনের দোকানের মালিক শান্তনু ঘোষ বলছেন, ‘‘ধার বাকির কারবার সে ভাবে নেই। তবে নিয়ম করে ক্রেতাদের নববর্ষের দিন ডাকি। গণেশ পুজো হয়। পঞ্জিকা ক্যালেন্ডার তুলে দিই। কোভিডের জন্য গত দু বছর কাউকে ডাকতে পারি নি। এ বার সব আগের মতোই হবে। দোকান ঝাড়া মোছার কাজ চলছে।’’
জেলার বিভিন্ন দশকর্মা দোকানের মালিকরা বলছেন, গত দু’বছরের তুলনায় গণেশ লক্ষ্মীর মূর্তি বিক্রি বেড়েছে এ বার। বেড়েছে পুজোর উপকরণ কেনার ধুমও। তবে কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় নিয়ম মেনে হালখাতা ফিরলেও ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা অনেকটাই কমেছে বলে বুঝতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। তবে তা সস্ত্বেও বাজারের পালে হওয়া লেগেছে আগের তুলনায়। কেনাকাটা বেড়েছে বস্ত্র ও স্বর্ণ বিপণিগুলিতেও।’’