অনেকটাই ফাঁকা ছিল গড়পঞ্চকোট। নিজস্ব সংবাদদাতা।
বড়দিনে ছুটির হুল্লোড়ে বাঁকুড়ায় কার্যত শিকেয় উঠল স্বাস্থ্য-বিধি। মেলা চলায় মল্লরাজধানী বিষ্ণুপুরে এমনিতেই ঢল নেমেছে পর্যটকদের। শুক্রবার, বড়দিনে বিষ্ণুপুরের লালগড় প্রকৃতি উদ্যান ও শহরের মন্দিরগুলিতেও ভিড় ছিল। বহু মানুষের মুখেই ছিল না মাস্ক। জমজমাট ছিল মুকুটমণিপুর আর শুশুনিয়াও। সেখানেও একই ছবি। জেলা পুলিশের একটা কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রেখেছিলাম। যাঁরা মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরি করছিলেন, তাঁদের মাস্ক পরানো হয়েছে।’’
মুকুটমণিপুর পর্যটনকেন্দ্রে নভেম্বরের শেষ থেকেই অনেকে বেড়াতে আসছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, চলতি মরসুমে শুক্রবার সব থেকে বেশি ভিড় হয়েছিল। মুকুটমণিপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি সূত্রে খবর, এ দিন পিকনিক পার্টির ৬৩টি বাস ও ৫৩৫টি ছোট গাড়ি এসেছিল। টোল আদায়কারীরা জানাচ্ছেন, গত বছর বড়দিনে আসা গাড়ির সংখ্যা ছিল এর প্রায় চারগুণ।
মুকুটমণিপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিপুল সাহু বলেন, “গত বারের তুলনায় ভিড় কম। তবে করোনা-পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা যতটা মার খাবে বলে আশঙ্কা করেছিলাম, পরিস্থিতি তার চেয়ে ভাল।’’ মুকুটমণিপুরের হস্তশিল্প ব্যবসায়ী পতিতপবন সাহু বলেন, “অন্য বারের থেকে এ বছর বড়দিনে বিক্রিবাটা কিছুটা কমই হয়েছে।”
এ দিন মুকুটমণিপুরে বেড়াতে আসা বাঁকুড়ার রাজগ্রামের সুমন দাস মোদক বলেন, “গত কয়েক বছরে মুকুটমণিপুরের চেহারা অনেকটা বদলে গিয়েছে। প্লাস্টিক, থার্মোকলের জিনিসপত্র ব্যবহার করা হচ্ছে না। সাউন্ডবক্সের দাপাদাপিও নেই। পরিবেশে একটা শান্তির ভাব রয়েছে।” জলাধারের পাড়ে ও নৌকায় অনেককেই এ দিন মাস্ক ছাড়া দেখা গিয়েছে। নৌকায় বসে ঝাড়গ্রামের বিনপুরের শান্তিনাথ মাহাতো বলেন, “মাস্ক পকেটে রয়েছে। সব সময় পরে থাকা যাচ্ছে না। খুবই অস্বস্তি হচ্ছে বলে একটু খুলে রেখেছি।”
শুশুনিয়া পর্যটনকেন্দ্রে এ দিন ৬০টি বড় বাস লোকজন নিয়ে পিকনিকে এসেছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এ ছাড়া, ছিল কয়েকশ’ ছোটো গাড়ি। এই পর্যটনকেন্দ্রে গত বছর থেকেই পিকনিকে সাউন্ডবক্স বাজানো নিষিদ্ধ হয়েছে।
এ বার সেই উৎপাত তেমন ছিল না। সকাল থেকেই ছিলেন ছাতনা থানার পুলিশ কর্মীরা। জেলা থেকেও পুলিশ কর্তারা গিয়েছিলেন। পিকনিক করতে আসা পুরুলিয়ার মানিক মহাপাত্র ও বীরেন কুণ্ডু ভিড় কাটিয়ে পাহাড়ের চড়াইয়ে উঠতে যাচ্ছিলেন। মাস্ক নেই কেন? তাঁদের জবাব, “করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে।”
সাধারণ মানুষের একাংশের করোনা নিয়ে গা-ছাড়া ভাব চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের। বাঁকুড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সোরেন বলেন, “আমরা এখনও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পৌঁছইনি। উল্টে করোনা ভাইরাসের চরিত্র বদলে তা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মত প্রাথমিক সতর্কতায় কোনও রকমের ঢিলে দিলেই বিপদ।’’