dubrajpur

মাঠের পাকা ধানে হানা বাদামি শোষক পোকার, উদ্বেগে লোবা

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, লোবা  পঞ্চায়েত এলাকার অনেক গ্রামেই বাদামি শোষক পোকা হানা দিয়েছে। তার মধ্য ঝিরুল, শিমূলডিহি, আমুড়ি, মেটে গ্রামে প্রকোপ বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ০৭:১৫
Share:

ক্ষতিগ্রস্ত: গাছ শুকিয়ে মরে গিয়েছে লোবা এলাকার বহু ধানখেতে। নিজস্ব চিত্র

এ বার বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিপাতের অভাবে বেগ পেতে হয়েছিল ধান রোপণে। সেটা সামলে পরে চাষ করা গিয়েছিল। কিন্তু, এখন চাষিদের নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাদামি শোষক পোকা। দুবরাজপুরের লোবা এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে ওই পোকার আক্রমণে বিঘের পর বিঘে ফসল নষ্ট হচ্ছে বলে। চাষিদের বক্তব্য, পোকার হানা বহু ফসল নষ্ট করেছে। কীটনাশক প্রয়োগ চলছে ঠিকই। কিন্তু পোকার আক্রমণ সামলে আদৌও ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কি না, তাঁরা জানেন না।

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, লোবা পঞ্চায়েত এলাকার অনেক গ্রামেই বাদামি শোষক পোকা হানা দিয়েছে। তার মধ্য ঝিরুল, শিমূলডিহি, আমুড়ি, মেটে গ্রামে প্রকোপ বেশি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মহকুমা ও ব্লক কৃষি আধিকারিকেরা বুধবারই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।

ওই দলে থাকা দুবরাজপুরের সহ কৃষি অধিকর্তা মঙ্গল দাস বলেন, ‘‘চোখে যেটুকু দেখা গিয়েছে, আক্রান্ত এলাকায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়েছে। যে জমিগুলিতে ইতিমধ্যেই ক্ষতি হয়েছে, সেগুলিতে আর কিছু করার নেই। বাকি জমিতে কী ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করে শোষক পোকার আক্রমণ প্রতিহত করে বাকি ফসল ঘরে তোলা যায়, তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার লোবার কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পোকার আক্রমণ কার্যত ‘পাকা ধানে মই’ দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। জমির যে সমস্ত জায়গায় পোকার হামলা বেশি, সেখানে গাছ শুকিয়ে মরে গিয়েছে। যে জমিগুলিতে এখনও পোকার আক্রমণ ততটা জোরালো নয়, সেখানে কীটনাশক স্প্রে চলছে।

ঝিরুল গ্রামের চাষি রণবীর চৌধুরী জানান, তাঁর স্ত্রী কুমকুমের নামে আড়াই বিঘে জমি রয়েছে। ধান প্রায় পেকে এসেছিল। পোকার হামলায় সব শেষ। একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই গ্রামের চাষি বৈদ্যনাথ মণ্ডল, মহাদেব ঘোষ, বিশ্বনাথ চৌধুরীরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘ছোট্ট শ্যামা পোকার মতো দেখতে। তবে সবুজ নয়, বাদামি। জমিতে পা দিলেই দেখা যাচ্ছে, ধান গাছের গোড়ার আশপাশে থিকথিক করছে এই পোকা। আজ যে জমি সবুজ মনে হচ্ছে, পরদিনই দেখা যাচ্ছে ধান শুকিয়ে গিয়েছে। এমন অবস্থা যে খড়টুকুও পাওয়া যাবে না।’’

জমির ধানের বড় অংশ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিমূলডিহি গ্রামের চাষি শেখ সাত্তার এবং মেটেগ্রামের ধর্মদাস ঘোষ। তাঁদের কথায়, ‘‘স্বর্ণ প্রজাতির (দীর্ঘ মেয়াদি) ধান যে মাঠে বেশি হয়েছে, সেখানেই পোকার আক্রমণ বেশি হয়েছে। কীটনাশক প্রয়োগেও খরচ বেশি। তবে, তাতেও শেষ রক্ষা হবে কিনা জানি না।’’

কৃষি দফতর জানিয়েছে, এ বার ধান একটু দেরিতে রোয়া হয়েছে। ফলে ধানের ফলন আসতে দেরি হয়েছে। তার উপরে শেষ বেলার বৃষ্টিতে উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া থাকায় বাদামি শোষক পোকার আক্রমণ হয়েছে। এই পোকার হামলা ঠেকাতে আট সারির পরে জমিতে এক সারি ফাঁকা রাখার কথা বলা হয়ে থাকে। জমিতে জল জমে থাকলে চলবে না। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন যুক্ত সার দেওয়ায় ফলেও পোকার আক্রমণ বেশি হয়। কিন্তু, চাষিরা সব ক্ষেত্রে তা মানেন না।

জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা (সিড সার্টিফিকেশন) সুখেন্দু বিকাশ সাহা বলেন, ‘‘জমিতে জল জমে আছে, স্যাঁতস্যাঁতে ভাব এবং উষ্ণ পরিবেশে বংশবিস্তার করে বাদামি শোষক পোকার দল। রস চুষে খায় বলে (সিস্টেমিক) কীটনাশক দিতে হবে। তবে ঠান্ডা পরিবেশ পেলে পোকার আক্রমণ কমবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement