তখন দুপুর। কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় সাঁইথিয়া ডাকঘরের দরজা
ব্যাঙ্ক থেকে দরকারি টাকা মিলছে না। সেই কারণে নোট জোগাতে নাজেহাল দশা জেলার ডাকঘরগুলির। ‘‘ব্যাঙ্কের অসহযোগিতায় পরিষেবা মার খাচ্ছে ডাকঘর গুলি’’ — শনিবার এমনই অভিযোগ করলেন জেলার সিউড়ি মূখ্য ডাকঘরের আধিকারিক ও ডাকঘর কর্মী সংগঠনের সদস্যরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট জেলার এই তিনটি মহকুমায় রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কের(স্টেট ব্যাঙ্ক) মূল শাখার ও সাঁইথিয়া শাখার মাধ্যমেই লেনদেন নিয়ন্ত্রিত হয়। সংগৃহীত অর্থ দিনের শেষে ওই শাখায় জমা হয়। পরদিন সেখানে থেকে টাকা তুলে ফের ডাকঘরগুলিতে পাঠানো হয়। এখন প্রতিদিন জেলার ডাকঘরের বিভিন্ন শাখায় বিপুল পরিমাণে অর্থ জমা হচ্ছে।
ডাকঘরের কর্মী সংগঠনের সম্পাদক প্রভাত পালের দাবি, সেই টাকাই নিতে অস্বীকার করছে রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কের মূল শাখাগুলি। সিউড়ি এবং বোলপুরের ব্যাঙ্ক ডাকঘর থেকে সংগৃহীত অর্থ জমা নেয়নি শুক্রবার। আবার নতুন টাকা দিতেও অস্বীকার করছে। যে কারণে অধিকাংশ সাব ডাকঘরে টাকা পাঠানো যায়নি। ফলে পরিষেবা মার খেয়েছে। শনিবারও দিনভর একই ছবি ছিল। বোলপুর শাখা টাকা নেয়নি। সিউড়ি ব্যাঙ্কে ডাকঘরের বিভিন্ন অফিস থেকে আসা ১৩ কোটি টাকার জমা দিতে গেলে, ৩ কোটি জমা নিয়েছে ব্যাঙ্ক। আর ২০০০ টাকার নোট এক কোটি টাকা দিয়েছে।
ডাকঘরের অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীপ্তেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর বলছেন, ‘‘ডাকঘর থেকে কোনও অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এমনিতে ১০০ টাকার নোটের অভাব চলছে। তবে টাকা জামা না নেওয়ার অভিযোগ থাকলে অবশ্যই বিষয়টি দেখব।’’
বাতিল টাকা জমা দেওয়া এবং বদল করা সমস্যা ঘোচাতে শনি ও রবিবার ছুটির দিনেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্বাভাবিক লেনদেনের কথা ঘোষণা করেছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঘোষণা মোতাবেক এ দিনও সকাল থেকে বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকার ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ঘটনা হল, শান্তিনিকেতন ডাকঘরে টাকা না আসায়, সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে শুধু মাত্র টাকা জমা দিয়েছেন গ্রাহকেরা। ওই গ্রাহকদের অভিযোগ অবিলম্বে ডাকঘরে টাকা পাঠানো হোক।
এদিকে বিশ্বভারতীর একাধিক ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য এটিএম কাউন্টার স্বাভাবিক না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। কোথাও লিঙ্ক নেই আবার কোথাও টাকা নেই। এমনই দিনভর লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তি হয়েছে গ্রাহকদের। বাসিন্দাদের ভোগান্তি ঘুচিয়ে, স্বাভাবিক পরিষেবা করার দাবি তুলেছেন নাগরিকেরা। নোট বদল ঘিরে রামপুরহাট মহকুমার বিভিন্ন ডাকঘরেও সকাল থেকে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা যায়। রামপুরহাট পাঁচমাথা মোড় সংলগ্ন মহকুমা ডাকঘরের প্রধান কার্যালয়ে সকাল নটাতেই লাইন ছাড়িয়ে যায় রাস্তায় চলে যায়। দুপুর বারোটার পরে সেই লাইন কিছুটা হালকা হয়। রামপুরহাটে ডাকবিভাগের প্রধান কার্যালয় থেকে মহকুমার ১৮টি উপ-ডাকঘরে টাকা লেনদেন হয়। এমনিতেই অন লাইনে লিঙ্ক ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন উপ-ডাকঘর নিয়ে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা মুরারই ডাকঘরের। এলাকার বাসিন্দা জগন্নাথ সেবা দত্ত, আসরাফ আলিরা জানান, পেনশন বাবদ প্রাপ্য টাকা থেকে গ্রাহকরা তাঁদের জমা টাকা পেতেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
রামপুরহাটে ডাক বিভাগের মহকুমার প্রধান কার্যালয়ের পোস্ট মাষ্টার অভিজিত দাস বলেন, ‘‘পাঁচশো টাকা, হাজার টাকা নোট বদল করার জন্য প্রথম থেকেই দুটি কাউন্টার করা হয়েছে। সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা জমা, টাকা তোলার ক্ষেত্রে আরো তিনটে কাউন্টার করা হয়েছে।’’
শনিবার দুপুরে সাঁইথিয়া মেন পোস্ট অফিসের সামনে প্রচুর গ্রাহক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন টাকা তোলার জন্য। হঠাৎ রটে যায় টাকা শেষ হয়ে গেছে। হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ডাকঘরের গেট নামিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। তারপর জানালা দিয়ে স্লিপ দেওয়া শুর হয়। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য গেট খুলে ফের আগের মতোই টাকা দেওয়া হয়। পোস্ট মাষ্টার ভবানি গড়াই বলেন, ‘‘দুপুরে টাকা শেষ হয়ে গেছিল একথা ঠিক। কিন্তু টাকা দেওয়া হবে না এমন কথা বলা হয়নি। মিনিট পনেরোর মধ্যেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা আনিয়ে সমস্ত গ্রাহককে টাকা দেওয়া হয়।’’
জেলায় মোট ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে ২৮৮টি। এটিএমের সংখ্যা ১২১টি। কিন্তু শুক্রবারের মতো শনিবারও অধিকাংশ এটিএম বন্ধ ছিল। ব্যাঙ্কের মূল শাখার সামনে থাকা এটিএমগুলি চালু থাকলেও, টাকা ভরার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। গ্রাহকদের প্রশ্ন, কবে স্বাভাবিক হবে পরিষেবা।
জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীপ্তেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর বলছেন, ‘‘প্রতিটি শাখা থেকে পরিষেবা দেওয়ার সাধ্যমত চেষ্টা চলছে। পদ্ধতিগত অসুবিধার জন্য এটিএম পরিষেবা স্বাভাবিক করা এখনই সম্ভব নয়। ব্যাঙ্কের কাছে থাকা এটিএমগুলি চালু রাখে মূলত লেনদেন হচ্ছে ১০০ টাকার নোটে। সেই নোটেরই এখন অভাব। তবে সহযোগিতা করছেন গ্রাহকেরাও।’’