গুজরাতিতেও সমাজমাধ্যমে সাজা ঘোষণার খবর দিয়ে বার্তা। নিজস্ব চিত্র
এক মিনিটের নীরবতা।
১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বামুনডিহা মোড় থেকে বরাবাজার থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার কয়েকদিন পরে যে অকড়বাইদ গ্রাম শেষবার দেখেছিল বুধন শবরকে, সেই গ্রামের শবর সম্প্রদায়ের মানুষজন মঙ্গলবার নীরবতা পালন করেই শ্রদ্ধা জানালেন তাঁদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক বুধনকে।
দীর্ঘ ২৫ বছরের লড়াই শেষে প্রাপ্ত ন্যায় বিচার এ দিন এক অর্থে উদ্যাপনই করেছে অকড়বাইদ। গ্রামের শবর টোলায় বুধনের স্মৃতিতে তাঁরা নীরবতা পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দা সাবিত্রী শবর। তাঁর কথায়, ‘‘সোমবার আমরা সবাই আদালতে গিয়েছিলাম। আর এ দিন সবাই মিলে বুধনের জন্য নীরবতা পালন করেছি।’’
‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি’ এ দিন সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরে সামাজিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি বৈঠকও করেছে। বৈঠকটি হয় সমিতির সদর দফতর পুঞ্চার রাজনওয়াগড়ে। সমিতির অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, ‘‘বুধনের জন্য দীর্ঘ লড়াইয়ে ন্যায় বিচার মিলেছে। কিন্তু এটাই তো শেষ নয়। এই জয় আমাদের নতুন উদ্যমে এগোনোয় সহায়ক হবে।’’ সেই লক্ষ্যে বৈঠকে চার দফা সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১) শবর সম্প্রদায়ের সব শিশুকে স্কুলে পাঠাতে হবে। ২) মদ বিরোধী আন্দোলন আরও শক্তিশালী করতে হবে। ৩) শবর সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে এমন গ্রাম বা টোলায় সচেতনতা শিবির হবে। সেখানে আইনি নানা বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। ৪) যে গ্রামে শিবির হবে সেখানকার প্রধান সমস্যা উঠে এলে সংগঠনের পক্ষে সমাধানের চেষ্টা হবে। বাকিটা প্রশাসনের নজরে আনা হবে।
বুধন মামলা জয়ের পরে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিনন্দনবার্তা এসেছে সমিতির কাছে। প্রশান্ত জানান, সমিতি যে মামলা করেছিল সেটিই দেশে ডিএনটি (ডিনোটিফায়েড অ্যান্ড নোমাডিক ট্রাইবস) হত্যার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা। তারপরই গুজরাতের বরোদায় সর্বভারতীয় ডিনোটিফায়েড এবং যাযাবর গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা সমিতি গড়ে ওঠে। ডিএনটি রিসার্চ অ্যাকশন গ্রুপ বলা হত এই সংগঠনকে। লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী ছিলেন তার সভাপতি, সম্পাদক বরোদারই বাসিন্দা গণেশ নারায়ণদাস দিভী। পরে তিনি কর্ণাটকের তেজগড়ে ট্রাইব্যাল অ্যাকাডেমিও গড়ে তুলেছেন। গণেশ অভিনন্দনবার্তায় জানিয়েছেন, এই জয় সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ডিএনটিদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে প্রথম জয়।
আমেদাবাদের ছারানগরে বুধনের মৃত্যুর পরে যে নাট্য আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন দক্ষিণ বজরঙ্গী ছারা। প্রশান্ত বলেন, ‘‘তিনিও আমাদের অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন। বলেছেন, এই লড়াইয়ে বুধনের মৃত্যুর প্রতিবাদই প্রথম পথ দেখিয়েছিল। এই রায় এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাইলফলক হয়ে থাকবে।’’ ভিন্ রাজ্যের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও এই রায়কে সমাজমাধ্যমে তুলে ধরেছে।