ফাইল চিত্র।
দুবরাজপুরের লোবায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কয়লা খনি গড়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু, নানা কারণে প্রস্তাবিত কয়লাখনি গড়ার কাজ থমকে রয়েছে অনেক দিন হল। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের এক সিদ্ধান্তের পরে প্রস্তাবিত খনি-প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ঘিরে দুশ্চিন্তায় লোবার বাসিন্দাদের একাংশ।
কী সেই সিদ্ধান্ত?
নানা কারণে দীর্ঘদিন কয়লা খনি গড়ার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি, এমন সরকারি সংস্থাগুলিকে কোনও জরিমানা ছাড়াই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আর্থিক বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি। লোবায় জমির উপযুক্ত দাম ও পুনর্বাসন নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালাচ্ছে যারা, সেই ‘লোবা কৃষি জমি রক্ষা কমিটি’র আশঙ্কা, কোল ব্লকের দায়িত্ব পাওয়া সত্ত্বেও খনি গড়ার কাজ সে-ভাবে এগোতে না-পারায় প্রকল্প থেকে কি সরে যাবে ডিভিসি বা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন? কারণ, প্রায় আট বছর আগে একক ভাবে খনি গড়ার দায়িত্ব পেলেও জমিদাতাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং কাঙ্ক্ষিত পুর্নবাসন প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারেনি ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা।
কৃষিজমি রক্ষা কমিটির বক্তব্য, ডেউচা পাঁচামির পুর্নবাসন ও ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ পরে লোবার মানুষ উজ্জীবিত হয়েছিলেন। বড় অংশের মত ছিল, ওই প্যাকেজ লোবায় দিলে খনি গড়ায় কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু, তার পরে প্রকল্প ঠিক কী অবস্থায়, তা তাঁজের জানা নেই। কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার বলেন, ‘‘এত দিন ধরে খনি গড়ার কাজ ডিভিসি এগোতেই পারেনি। ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার সরে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কারণ, কোভিড-কালেই এলাকা থেকে অফিস গুটিয়ে নিয়েছে ওই সংস্থা।’’ জয়দীপের সংয়োজন, এই এলাকার মানুষ বরাবরই কয়লা খনির পক্ষে। শর্ত একটাই, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পূর্নবাসন প্যাকেজ দিতে হবে। কিন্তু, কোথায় একটা সমন্বয়ের অভাব থেকে গিয়েছে।
বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় যদিও বলছেন, ‘‘ডেউচা-পাঁচামির পাশাপাশি লোবা নিয়ে ডিভিসি-র সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে প্রশাসনের। তবে তারা প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেবে, এমন সিদ্ধান্তের কথা ডিভিসি প্রশাসনকে জানায়নি।’’
মহম্মদবাজারের মতো কয়লা খনির জন্য লোবাতেও সাড়ে তিন হাজার জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। প্রায় ৭০০ একর জমি কেনা হলেও সে কাজ এগোয়নি। জমি কেনার পদ্ধতি ঘিরে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আন্দোলনের জেরে ২০১২ সালে থমকে গিয়েছিল প্রস্তাবিত কয়লাখনি গড়ার কাজ। ’১৪ সালে কোল ব্লক বাতিলের পরে একক ভাবে দায়িত্ব পায় ডিভিসি।
প্রশাসনিক সহায়তায় জমি জরিপের কাজ শেষ হলেও পুনর্বাবসন প্যাকেজ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে গত ছয়-সাত বছরেও পৌঁছতে পারেনি সংস্থা। অতিমারির সময়ে পুরো কাজটাই থমকে যায়। জানা গিয়েছে, ডিভিসি একর প্রতি ১৪ লক্ষ টাকা প্রাথমিক ভাবে স্থির করেছিল। কারও সেটা পছন্দ হয়নি।
ডেউচা প্যাকেজ আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু এর মধ্যেই ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত সামনে এল। তার হাত ধরে লোবার মানুষের দুশ্চিন্তাও বাড়ল।