বেপরোয়া: ‘মাস্ক’ ছাড়াই। বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জে। ছবি: শুভ্র মিত্র
নাইলনের দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়েছে ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’-এর রাস্তায়। নজরদারি চালাচ্ছেন দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার। কিন্তু কার্যত তাঁদের নাকের ডগা দিয়েই অবাধে সে দড়ি টপকে যাওয়া-আসা করছেন অনেকে। শুক্রবার বেলা ১২টা নাগাদ খাতড়ার পাম্প মোড় লাগোয়া ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’-এ এমনই দৃশ্য দেখা গেল। একই ছবি খাতড়ার কোর্ট সংলগ্ন এলাকাতেও। সেখানেও ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’-এ অবাধে যাতায়াত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ। ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’-এর আওতায় আসা খাতড়ার সিনেমা রোডের বাসিন্দা ভোম্বল রজক বলেন, “ভেবেছিলাম, ভীষণ কড়াকড়ি কিছু হবে। তবে এ তো দেখছি কেবল নাইলনের দড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। দোকানপাটও খোলা। কেউই ‘মাস্ক’ পরছেন না। অবাধেই যাতায়াত করা যাচ্ছে।” এসডিপিও (খাতড়া) বিবেক বর্মা বলেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
জ়োন-ভিত্তিক ‘লকডাউন’-এর দ্বিতীয় দিনে ছবিটা বিশেষ বদলায়নি বাঁকুড়া শহরের ফাঁসিডাঙার ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’-এ। এ দিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, হরিজন কলোনির ঢোকার রাস্তায় ব্যারিকেড করা হয়েছে। কেউ যাতে বাইরে বেরোতে বা ভিতরে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য নজরদারিও চালাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা। তার পরেও স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ পুলিশের নজর এড়িয়ে বস্তির ভিতরের গলিপথ ধরে বাইরে বেরোচ্ছেন বলে অভিযোগ। সে কথা মেনে নিয়েছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের অনেকেও।
হরিজন কলোনির বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, “বস্তির ভিতরে বেশ কয়েকটি গলি রয়েছে বাইরে যাতায়াত করার জন্য। সব গলিতে পুলিশ নেই।” যদিও জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “হরিজন কলোনিতে যাতায়াতের তিনটি পথেই পুলিশ কর্মী মোতায়েন রয়েছে। কেউ ওই কন্টেনমেন্ট জোন থেকে বেরোতে পারছেন না।” স্থানীয় সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে ‘লকডাউন’ শুরু হলেও প্রথমে পুলিশ সেখানে যায়নি। বিষয়টি বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ ও জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাওয়ের নজরে এলে রাত ১০টা নাগাদ পুলিশ হাজির হয়।
বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জ এলাকায় ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’-এ অবশ্য আঁটোসাঁট ব্যবস্থা দেখা গিয়েছে এ দিন। গোপালগঞ্জ এলাকায় ঢোকার দু’পাশের রাস্তা বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দিয়েছে পুলিশ। ওই এলাকায় অন্য কোনও গলি দিয়ে ঢোকা বা বেরনোর রাস্তা নেই। এ দিন গিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় ভিড় নেই তেমন। বাড়ির বারান্দা থেকে অনেকেই উঁকি দিয়ে পুলিশি তৎপরতা দেখছিলেন। সকালে ওই ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’-এ জীবাণুনাশক ছেটানো হয়। বিষ্ণুপুরের পুরবোর্ডের প্রশাসক শ্যাম মুখোপাধ্যায় বলেন, “কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাসিন্দাদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আগামী সাত দিন এ ভাবেই পুরসভার তরফে তাঁদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে।”
বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ বলেন, “কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে রাজ্যের নির্দেশে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দাদের সুবিধা-অসুবিধার দিকটিও আমরা দেখছি।” পুলিশ সুপার বলেন, “কন্টেনমেন্ট জ়োনে যাতে নিয়মকানুন মেনে চলা হয়, সে দিকে পুলিশের নজর রয়েছে। কোথাও নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাইনি।”