আয়োজন: রাজাগোড়ার পথে ‘ডাস্টবিন’। ছবি: শুভেন্দু তন্তুবায়
বৃষ্টি এসে মুছে দিয়েছে দেওয়ালে লেখা সতর্কবার্তা। কিন্তু তিন মাস পরেও সতর্কতায় চিড় ধরেনি ‘মডেল গ্রাম’-এ। বাঁকুড়ার সিমলাপালের রাজাগোড়ার মাঠে মাঠে এখন একে অন্যের থেকে পাঁচ ফুট দূরত্ব রেখে ধান রুইছেন চাষিরা। মহকুমাশাসক (খাতড়া) রবি রঞ্জন বলেন, ‘‘স্থানীয় ব্লক প্রশাসনকে খোঁজ রাখতে বলা হয়েছে। ওই গ্রামের মানুষ এখনও করোনা সচেতনতার নিয়মগুলি
মেনে চলছেন।’’
গত এপ্রিলে রাজাগোড়া গ্রামটিকে করোনা যুদ্ধের ‘মডেল’ হিসাবে গড়ে তোলা শুরু করেছিল মহকুমা প্রশাসন। গ্রামে প্রায় ৬০টি পরিবারের বাস। সবাই তফসিলি জাতি ও জনজাতির। সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার দু’পাশে নির্দিষ্ট দূরত্বে বাঁশের ডাস্টবিনে এখন নিয়ম করে আবর্জনা ফেলছেন বাসিন্দারা। তিনটি নলকূপের পাশেই বোতলে ভরে রাখা আছে সাবান জল। প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর ধামসা-মাদল বাজিয়ে ‘কোভিড বন্ধু’রা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এ বার হাত ধুতে হবে।
গ্রামের অল্প কয়েকজন সরকারি-বেসরকারি চাকরি করেন। বাকি সবাই হয় চাষি, নয়তো দিনমজুর। চাষের ভরা মরসুমে তাঁদের প্রায় নাওয়াখাওয়ার সময় নেই। ‘কোভিড বন্ধু’ পদ্মলোচন মুর্মু, জ্যোতিলাল সোরেন ও অশোক হেমব্রম বলেন, ‘‘কাজে যাওয়ার সময় সবাই সাবান নিয়ে যাচ্ছেন। খাবার আগে নিয়ম করে হাত ধুচ্ছেন। মাঠে কাজ করার সময় মুখে ‘মাস্ক’ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তবে সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সে জন্য সবাই দূরে দূরে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন।’’
পাশের গ্রাম পুখুরিয়ার শিল্পী চন্দন রায় করোনা-সচেতনতার বার্তায় সাজিয়ে তুলেছিলেন রাজাগোড়াকে। খাতড়া-সিমলাপাল রাস্তায় রাজাগোড়া বাসস্টপে বাঁশের কাঠামোয় খেজুরপাতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ‘মাস্ক’ পরা পেঁচার আদলে একটি তোরণ। এখন অবশ্য সেটির চিহ্ন নেই।
গ্রাম থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে রাজাগোড়া বাসস্টপে দেখা হল চন্দনবাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘ঝড়ে তোরণটা ভেঙেছে। এ বার লতানো গাছ দিয়ে তৈরি করা হবে। দু’পাশে গাছ লাগানোও হয়েছে।’’ নিজেই দেখান, বেড়ার মাঝে গাছগুলি বেশ কিছুটা বড় হয়ে উঠেছে। বিডিও (সিমলাপাল) রথীন্দ্রনাথ অধিকারী জানিয়েছেন, বর্ষা গেলেই আবার দেওয়াল-লেখা হবে।