গন্ধেশ্বরী নদী।— ফাইল চিত্র।
গতবারের ক্ষতই এখনও পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। তার আগেই ফের এ বারের বর্ষাতেও গন্ধেশ্বরীর বান আছড়ে পড়ল বাঁকুড়ার সতীঘাট কজওয়ে সংলগ্ন গন্ধেশ্বরীর চরে গড়ে ওঠা আবাসনে। গতবার গন্ধেশ্বরীর স্রোতের টানে ভেসে গিয়েছিল ওই আবাসনে ঢোকার মূল রাস্তাটাই। তা নতুন করে গড়ার কাজ চলছিল। এ বারের বর্ষায় সেই নির্মীয়মাণ রাস্তারই একাংশ ফের ভাসিয়ে নিয়ে গেল গন্ধেশ্বরী।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এ বার অবশ্য অনেকটাই রক্ষা করেছে আবাসনের অদূরে, গন্ধেশ্বরীর চরে নির্মীয়মাণ বাঁকুড়া পুরসভার রিজার্ভার। বানের বেশির ভাগ ধাক্কাটা সামলে আবাসনকে কিছুটা সুরক্ষিত করতে পেরেছে ওই রিজার্ভার। তবে পুরোটা হয়নি। গন্ধেশ্বরীর জল এ বারও ঢুকেছে আবাসন চত্বরে। তবে পাঁচিলের একাংশ ভেঙে মাটির ঢিবিতে ধাক্কা খেয়ে আবাসন পর্যন্ত আর আসেনি।
বাসিন্দাদের আশঙ্কা তাতে কমছে না। এই আবাসনের বাসিন্দা সুদীপ মিত্র, শিউলি মুখোপাধ্যায়, সুতপা মণ্ডলদের কথায়, “গত বারের স্মৃতি এখনও টাটকা। তাই আকাশে বর্ষার মেঘ দেখলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি।”
তাঁরা জানান, গত বারের বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে গন্ধেশ্বরীর জল গোটা আবাসন চত্বরে ঢুকে পড়েছিল। আবাসনে ঢোকার রাস্তা, পাঁচিল ভেঙে গিয়ে খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিল নদীতে। আবাসনের ভিতের পলেস্তরা খসে লোহার খাঁচা বেরিয়ে এসেছিল। প্রায় পনেরো দিন আবাসনে বিদ্যুৎ ছিল না। ভয়ে আবাসিকদের অনেকেই ঘর ছেড়ে শহরের বিভিন্ন হোটেলে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এ বারেও নিম্নচাপের বৃষ্টিতে গন্ধেশ্বরীর জলস্তর বেড়ে গিয়েছিল অনেকটাই। ফের একই ঘটনার আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। ওই আবাসনে সস্ত্রীক থাকেন বছর চুয়াত্তরের বিনয় বন্দ্যোপাধ্যায়। বিনয়বাবু হৃদ্রোগী। আবাসিকেরা জানান, নিম্নচাপের বৃষ্টি শুরু হতেই নানা দুর্ভোগের আশঙ্কায় ভুগছিলেন তিনি। কোনও রকম ঝুঁকি এড়াতে শেষ পর্যন্ত স্ত্রীকে নিয়ে পুরনো বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন।
এই মুহূর্তে আবাসনটিতে প্রায় ষাটটি পরিবার রয়েছে। আবাসনের বাসিন্দা সুমনা মাজি, শিখা কুণ্ডুদের কথায়, “বৃষ্টি মানেই এখন আমাদের কাছে আতঙ্ক। একটা নিম্নচাপ কাটলেও পাছে আরও একটা এসে পড়ে সেই আশঙ্কা নিয়েই দিন কাটাচ্ছি আমরা।”
গত বারের বর্ষায় ওই আবাসনের ক্ষয়ক্ষতি নজরে এসেছিল জেলা প্রশাসনের। আবাসনটিকে প্রথম থেকেই বেআইনি বলে দাবি করে আসছে প্রশাসন। যদিও এখনও পর্যন্ত আবাসন নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
গতবার বন্যায় আবাসনের ক্ষতি দেখতে এসে দ্রুত বন্যায় ভেসে যাওয়া গন্ধেশ্বরীর রাস্তা বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। রাস্তা তৈরিও করা হয়। তবে এ বারের জলের তোড়ে ফের সেই রাস্তা ভেসে গিয়েছে।
অরূপবাবু বলেন, “ওই আবাসন নির্মাণকারী সংস্থাকেই সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। আমি এই নির্দেশই গত বার দিয়েছিলাম।” আবাসিকদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ করছেন, এই দুরাবস্থার জন্য গন্ধেশ্বরী কজওয়েই দায়ী।
সুদীপবাবু, সুতপাদেবীরা বলেন, “কজওয়ের নীচে নদীর জল নিষ্কাশনের জন্য কয়েকটি পাইপ বসানো রয়েছে মাত্র। বন্যা হলেই ওই পাইপের মুখ বুজে যায়। জলের গতি বদলে আবাসনের দিকে চলে আসে।
প্রশাসন এই সমস্ত দিক ভেবে কজওয়েটি তৈরি করলে দুর্গতির শেষ হতে পারে বলেই মত তাঁদের।
(চলবে)