বাঁশের মাথায় ফোন তুলে ইন্টারনেট সংযোগ এনে সমীক্ষার কাজ দুবরাজপুর গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
বাঁশের ডগায় বাঁধা বাজারের থলে। তার ভিতরে ‘হটস্পট’ চালু করে রাখা একটি মোবাইল ফোন। সেই বাঁশ উপরে তুলে ধরে রয়েছেন এক গ্রামবাসী। পাশে আবাস প্রকল্পের সমীক্ষক দলের এক সদস্যের হাতে ‘ওয়াইফাই’ চালু করা আরও একটি মোবাইল। হঠাৎ তিনি চিৎকার করে উঠলেন, ‘‘নেটওয়ার্ক পেয়েছি! বাঁশ ঠিক মতো ধরে থাকুন।’’ অবশেষে শুরু হল আবাসের নির্দিষ্ট অ্যাপে সমীক্ষার তথ্য তোলার কাজ।
পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা কোনও দুর্গম জায়গা নয়, পুরুলিয়া ২ ব্লকের বেলমা পঞ্চায়েতের দুবরাজপুর গ্রামে কোনও টেলিকম সংস্থার নেটওয়ার্ক না থাকায় (শ্যাডো জ়োন) এ ভাবেই কাজ করতে হল আবাসের সমীক্ষক দলকে।
রাজ্য সরকারের আবাস প্রকল্পে নির্দিষ্ট অ্যাপ চালু করে উপভোক্তার ছবি-সহ তাঁর বর্তমান বাড়ি এবং প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাড়ি তৈরির জমির ছবি ‘আপলোড’ করতে হচ্ছে। সে জন্য নিরবছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ জরুরি। কিন্তু প্রথমে দুবরাজপুর গ্রামে নেটওয়ার্ক না পেয়ে ফিরে যায় সমীক্ষক দল। পরে ফের তাঁরা ওই গ্রামে গিয়ে বাঁশের ডগায় ফোন তুলে কাজ সারেন।
ওই সমীক্ষক দলের সদস্য পুরুলিয়া সদর ১ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক উজ্জ্বলকুমার দাস বলেন, ‘‘দুবরাজপুর গ্রামে কোনও টেলিকম সংস্থারই ভাল নেটওয়ার্ক নেই। ছাদে উঠলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছিল। প্রথম দফায় ফিরে যাই। পরের দফায় বাঁশে ফোন উপরে তুলে ইন্টারনেট সংযোগ পেয়েছি। ওই ভাবে ১০ জন উপভোক্তার তথ্য তুলতে হয়েছে।’’
দুবরাজপুরের বাসিন্দা মনোহর মাহাতো বলেন, ‘‘ইন্টারনেট ব্যবহার দূর, ফোনে কথা বলতে গেলেও ছাদে উঠতে হয়। সবার তো ছাদও নেই। গ্রামে আড়াই হাজার মানুষের বাস। কিন্তু আমাদের কথা কে ভাবে!’’ পুরুলিয়া ২ ব্লকের বিডিও বাপি ধর মানছেন, ‘‘সমীক্ষক দল বুদ্ধি খাটিয়ে ওই গ্রামে সমীক্ষা সম্পূর্ণ করেছে।’’
তবে একই সমস্যায় সমীক্ষার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি পুরুলিয়ারই পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা বান্দোয়ান ব্লকের সমীক্ষকেরা। বান্দোয়ানের বিডিও রুদ্রাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের ব্লকেও কিছু জায়গায় সমীক্ষকেরা হটস্পট ও ওয়াইফাই দিয়ে নানা ভাবে সংযোগ করে কাজ করেছেন। তবে ‘শ্যাডো জ়োন’-এর জন্য বেশ কিছু উপভোক্তার তথ্য তোলা যায়নি। জেলা প্রশাসনকে ‘শ্যাডো জ়োন’-এর তালিকাও দিয়েছি।’’ জঙ্গলমহলের ব্লক বাঘমুণ্ডির বিডিও আর্য তা জানান, নেটওয়ার্কের সমস্যায় তথ্য তুলতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) রানা বিশ্বাসের স্বীকারোক্তি, ‘‘শ্যাডো জ়োনের জন্য জেলার প্রায় ১৪০০ উপভোক্তার তথ্য এখনও তোলা যায়নি। বরাবাজার, মানাবাজার ১ ও বান্দোয়ান ব্লকে এমন উপভোক্তার সংখ্যা বেশি। রাজ্য সরকারকে সমস্যার কথা জানিয়েছি। তারা উপায় বাতলে দিলে, দ্রুত ওই কাজ শেষ করা হবে।’’
বিএসএনএল-এর পুরুলিয়া জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের ৪জি পরিষেবা দেওয়ার কাজ ৫০ শতাংশ এলাকায় এগিয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই পুরো জেলায় বিএসএনএল ভাল নেটওয়ার্ক পরিষেবা দিতে পারবে।’’