কোলে নাতি। ইঁদপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পথে সুমিত্রা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
কোথাও বাইক, সাইকেল ঠেলে অবরোধস্থল পার করতে দেওয়া হল। কোথাও সে ছাড়ও মিলল না। কোথাও অবরোধকারীদের কড়াকড়িতে টোটো ছেড়ে শিশু কোলে হাঁটতে হল প্রৌঢ়াকে। ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের ডাকা চাক্কা জ্যামের জেরে বুধবার বাঁকুড়া জেলায় ভোগান্তির এমন ছবিই দেখা গেল।
এ দিন সকালে কনকনে ঠান্ডার মধ্যে এক মাসের নাতিকে ইঁদপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাঁকুড়ার বনচিংড়া গ্রামের প্রৌঢ়া সুমিত্রা মণ্ডল। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেয়ে। বাস না পেয়ে টোটো ভাড়া করেছিলেন। পথে ইঁদপুর বাংলামোড়ে অবরোধকারীরা তাঁদের টোটো আটকে দেয়। সুমিত্রা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার নথিপত্র দেখিয়ে অবরোধকারীদের ছাড়ার জন্য অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি। সেখানেই টোটো আটকে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে নাতিকে কোলে নিয়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
সুমিত্রার ক্ষোভ, “সরকারের কাছে দাবিদাওয়া আদায়ে আন্দোলন করা যেতেই পারে। তবে এত অমানবিক আন্দোলন মেনে নেওয়া যায় না। সাধারণ মানুষকে এ ভাবে সমস্যায় ফেলা লোকজনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” সুমিত্রাদের টোটোচালক গৌতম মণ্ডল বলেন, “আমি অবরোধকারীদের বারবার অনুরোধ করলাম টোটো ছাড়ার জন্য। কিন্তু তাঁরা কোনও ভাবেই ছাড়লেন না। দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য কিছু মানুষ মানবিকতাও হারিয়ে ফেলেছেন।’’
এ দিন সকালে বাঁকুড়ার হেভিরমোড়ে, বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ও বাঁকুড়া-দুর্গাপুর ৯ নম্বর রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে মোটরবাইক ও আদিবাসী বাদ্যযন্ত্র রেখে অবরোধ শুরু করা হয়। রোগীর গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনও গাড়িকে সেখান দিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি।
তবে টোটো, মোটরবাইক, সাইকেল চালকেরা যানবাহন ঠেলে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। অথচ এক ব্যক্তি বাইকে আলুর বস্তা নিয়ে পার হতে গেলে তাঁকে আটকে দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তি বাইক ঠেলে অবরোধস্থল পার হওয়ার অনুমতি চাইলেও তাঁকে যেতে দেওয়া হয়নি। আটকে রাখা হয় তাঁর বাইক। বাইকে সওয়ার শিশু-সহ বহু দম্পতিকেই পায়ে হেঁটে ওই মোড় পার হতে হয়েছে।
বাঁকুড়ার জয়পুরে বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়কে অবরোধস্থলে যানবাহন ঠেলে পারাপারেও ছাড় দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বাঁকাদহের অবরোধস্থলে বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে ঠেলে নিয়ে যেতে বলা হয়। খাতড়ার পাম্পমোড়েও একই ছবি দেখা গিয়েছে। অনেক জায়গায় অবরোধকারীদের সঙ্গে বচসাও হয়।
বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রুটে অবরোধ না হওয়ায় ওই রুটে যানবাহন চলাচল করেছে। বিষ্ণুপুর-বাঁকুড়া রুটেও কিছু বাস চলতে দেখা গিয়েছে। তবে অধিকাংশ বাস না চলায় যাত্রীরা বাসস্ট্যান্ডগুলিতে দিনভর অপেক্ষায় থাকেন। অনেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, অন্য সময় অবরোধ তুলতে পুলিশের যে সক্রিয়তা থাকে, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই হয়তো এ দিন তা ছিল না।
অভিযোগ মানেননি পুলিশ-কর্তারা। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) বিবেক বর্মা বলেন, “অবরোধের জেরে কোথাও যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়, সে দিকে আমাদের নজর ছিল। সব জায়গাতেই পুলিশ উপস্থিত ছিল। অবরোধে ভোগান্তিতে পড়া মানুষজনকে সাহায্য করেছে পুলিশ। যানজট রুখতে পরিকল্পনামাফিক যানবাহনগুলিকে নানা জায়গায় আটকে দেওয়া বা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাঁকুড়া জেলা নেতা সনগিরি হেমব্রমের দাবি, “রোগী বা হাসপাতালে যাওয়া মানুষের জন্য সর্বত্রই ছাড় দেওয়া হয়েছিল। অবরোধ স্থলে যানবাহন নিয়ে হেঁটে চলাচলও সংগঠনের তরফে অনুমোদন করা হয়েছিল। সব জায়গাতেই এই নিয়ম মানা হয়েছে। তার পরেও কোথাও অবরোধকারীরা সমস্যা করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে সংগঠনের নেতৃত্ব এলাকায় ঘুরেছেন। এর বাইরে কোথাও যদি অবরোধকারীরা বিক্ষিপ্ত ভাবে খারাপ আচরণ করে থাকেন, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”