Coronavirus Lockdown

নিয়ম মেনেই ‘আনলক’

সোমবার থেকে চেনা ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকা। খুলছে অফিসকাছারি, হোটেল, শপিং মল, ধর্মস্থান। কিন্তু প্রথম দিনে কোনও জায়গাতেই মানুষের উপস্থিতি বিশেষ চোখে পড়ল না। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। পুরুলিয়া শহরের বড় মসজিদের ইমাম জয়নুল আবেদিন জানাচ্ছেন, এ দিন থেকে মসজিদ খুলে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২০ ০৪:২৭
Share:

আড়শা ব্লক অফিসে কর্মীরা।সোমবার। নিজস্ব চিত্র

পুরুলিয়া সদর

Advertisement

পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘সোমবার অফিসে কর্মীদের হাজিরার হার ছিল সত্তর শতাংশ।” পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোডের শপিং মল খুলে গিয়েছে এ দিন সকালেই। মলের তরফে বসন্ত কেডিয়া জানান, তাঁরা এক সঙ্গে সাত জনের বেশি লোককে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। ওই মলের উপরেই একটি রেস্তরাঁ রয়েছে। সেটির মালিক রাহুল অগ্রবাল বলেন, ‘‘সকালেই রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে। তবে সকালের দিকে লোকজন কার্যত আসেনি।” শহরের বিটি সরকার রোডের একটি খাবার হোটেলের মালিক অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য জানান, তাঁরা এ দিন সমস্ত পদই রান্না করেছিলেন। তবে লোক হয়েছিল খুবই অল্প।

পুরুলিয়া শহরের বড় মসজিদের ইমাম জয়নুল আবেদিন জানাচ্ছেন, এ দিন থেকে মসজিদ খুলে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই নামাজ পড়তে এসেছিলেন। যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনে চলা হচ্ছে।

Advertisement

রঘুনাথপুর

রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের অফিস এবং ছ’টি ব্লক দফতরে প্রায় সমস্ত কর্মী এসেছিলেন। বিডিও (নিতুড়িয়া) অজয়কুমার সামন্ত ও ও বিডিও (রঘুনাথপুর ২) মৃণ্ময় মণ্ডল জানান, যাঁদের পক্ষে আসা সম্ভব তাঁদের সবাইকে অফিসে আসতে বলা হয়েছিল। কয়েকজন বাদ দিয়ে প্রায় সমস্ত কর্মীই উপস্থিতি ছিলেন।

রঘুনাথপুর ও আদ্রার রেস্তরাঁগুলির প্রায় সমস্ত খুললেও, লোকজন প্রায় হয়নি। রঘুনাথপুর বাসস্ট্যান্ডের অদূরে একটি রেস্তরাঁর মালিক রাজেশ চক্রবর্তী জানান, টেবিলের সংখ্যা অর্ধেকের কম করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে চারটির বদলে দু’টি চেয়ার দেওয়া হয়েছে। আদ্রার ইয়ং মার্কেটে দু’টি রেস্তরাঁ রয়েছে বিষ্ণু গড়াইয়ের। তিনি জানান, একটি রেস্তরাঁ দু’টি টেবিল দিয়ে খোলা হয়েছে। আরেকটি খোলার সাহস পাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে লোকজন আদৌ কতটা রেস্তরাঁয় খেতে আসবে, বুঝতে পারছি না। খুললে কর্মীদের থাকা-খাওয়ার খরচ কী ভাবে উঠবে?’’

এ দিন থেকে মৌতোড় গ্রামের কালী মন্দির দর্শনার্থী ও ভক্তদের জন্য খোলা হয়েছে। পরিচালকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য জানান, মন্দিরের মূল দরজা খোলা হয়েছিল। তবে বেশি ভিড় হয়নি। ভিড় এড়াতে সর্তকতামূলক বেশ কিছু ব্যবস্থা তাঁরা নিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন সুব্রতবাবু।

মানবাজার

মানবাজার মহকুমা প্রশাসনের অফিসে এ দিন সরকারি নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট কর্মী নিয়ে কাজ হয়েছে বলে জানান ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নীলাঞ্জন তরফদার। বিভিন্ন ব্লক অফিসেও কর্মীদের হাজিরা ছিল অন্য দিনের থেকে বেশি।

বান্দোয়ানের হোটেল মালিক অমিত আগরওয়াল জানান, এ দিন থেকে হোটেল চালু করার কথা থাকলেও সেটা করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘বাস চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় অনেক কর্মী এসে পৌঁছতে পারেননি। দু’-এক দিনের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করছি।’’ মানবাজারের হোটেল ব্যবসায়ী নিতাই রায় জানান, তাঁর ভিতরে বার থাকায় হোটেল চালু করতে পারেননি তিনি। একটি লজও রয়েছে তাঁর। নিতাইবাবু বলেন, ‘‘কেউ থাকতেও আসেননি।’’

পুঞ্চার বুধপুরের শিবমন্দিরে প্রতিদিন প্রচুর ভিড় হয়। ‘লকডাউন’ চলায় এত দিন মন্দিরে শুধু নিত্যপুজো হয়েছে। মন্দিরের অন্যতম পূজারি বাবলু দেওঘরিয়া জানান, সোমবার মন্দিরে আগের মতো ভিড় নজরে পড়েনি। কয়েকজন ভক্ত এসেছিলেন। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে পুজো দিয়েছেন তাঁরা।

ঝালদা

মহকুমাশাসক (ঝালদা) সুশান্ত ভক্ত জানান, সোমবার প্রায় সত্তর শতাংশ কর্মী সরকারি দফতরগুলিতে উপস্থিত ছিলেন। বিডিও (ঝালদা ১) রাজকুমার বিশ্বাস জানান, কয়েকদিন ধরেই তাঁরা পুরুলিয়া শহর থেকে ব্লকের কর্মীদের অফিসে আনছেন। সোমবারও সেই বন্দোবস্ত ছিল। এ দিন থেকে ঝালদা শহরের রেস্তরাঁগুলি খুলেছে। রাঁচী-পুরুলিয়া রাস্তার পাশে একটি রেস্তরাঁর মালিক সঞ্জয় মাহাতো জানান, এখনই বসে খাবার ব্যবস্থা হয়নি। এ দিন থেকে হোম ডেলিভারি শুরু হয়েছে। বাঘমুণ্ডির লহরিয়া শিবমন্দির সোমবার খোলেনি। মন্দির পরিচালকমণ্ডলীর অন্যতম কর্মকর্তা নিবারণচন্দ্র মাহাতো জানান, আগেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ১৬ জুন থেকে মন্দির সবার জন্য খোলা হবে। সে সিদ্ধান্তই বহাল আছে।

বাঁকুড়া সদর

কর্মীদের ভিড় ফিরল। তবে কাজেকর্মে আসা মানুষজনের খুব ভিড় চোখে পড়ল না বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনিক ভবনে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সোমবার জেলাশাসকের দফতরে কর্মী হাজিরা ছিল প্রায় ৬৮ শতাংশ। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সরকারি নির্দেশ মেনে দূরত্ববিধি বজায় রেখে কাজকর্ম করা হয়েছে এ দিন।”

স্বাভাবিক দিনে বাঁকুড়া মেডিক্যালের আউটডোরে দৈনিক গড়ে ছ’হাজার রোগী আসেন। ‘লকডাউন’ চলাকালীন সংখ্যাটা নেমে দাঁড়িয়েছিল গড়ে প্রায় বারোশোয়। ‘লকডাউন’ খানিক শিথিল হয়ে সরকারি বাস পরিষেবা চালু হতেই রোগীর সংখ্যাও ধাপে ধাপে বাড়ছে আউটডোরে। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান জানান, সোমবার বাঁকুড়া মেডিক্যালে প্রায় দু’হাজার রোগী এসেছিলেন।

জেলা সদরে দোকানপাট অনেক আগেই খুলে গিয়েছিল। এ দিন থেকে শপিংমলগুলিও খুলতে দেখা গিয়েছে। বাঁকুড়ার লালবাজার এলাকার একটি শপিংমলে গিয়ে দেখা গেল, কর্মীদের উপস্থিত প্রায় স্বাভাবিক। তবে ক্রেতা তেমন আসেননি। শহরের রেস্তরাঁগুলিও এ দিন থেকে খুলেছে। বাঁকুড়ার একটি রেস্তরাঁর কর্ণধার প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনেই রেস্তরাঁ খোলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণ ভাবে মেনে চলছি। দূরত্ব বজায় রাখতেও আমরা তৎপর।”

জেলার এক্তেশ্বর, ষাঁড়েশ্বরের মতো প্রাচীন মন্দির ও মসজিদগুলি আগেই খুলে দেওয়া হয়েছিল। নিরাপদ দূরত্ববিধি মেনে ভক্তেরা মন্দিরে ঢুকেছেন সোমবার। মসজিদগুলিতেও ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার’ রাখা ছিল।

বিষ্ণুপুর

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত জানান, সোমবার বিষ্ণুপুর মহকুমা ও ব্লক দফতরগুলিতে ৭০ শতাংশের বেশি কর্মী উপস্থিত ছিলেন। ১১ জন স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীর সবাই এ দিন দফতরে এসেছিলেন বলে জানান মহকুমা খাদ্য নিয়ামক (বিষ্ণুপুর) দেবজ্যোতি তালুকদার। ব্লক কৃষি দফতরেও সমস্ত কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন কৃষি অধিকর্তা (বিষ্ণুপুর) তাপস ঘোষ। তবে অফিসকাছারিতে সাধারণ মানুষের ভিড় সে ভাবে চোখে পড়েনি।

বিষ্ণুপুর শহরে দু’টি শপিং মল রয়েছে। একটি রসিকগঞ্জ ও অন্যটি গড়দরজা এলাকায়। রসিকগঞ্জের শপিং মল বন্ধ ছিল সোমবার। তবে গড়দরজার শপিং মল খুলেছিল। সেটির কর্মকর্তা বিনোদ শর্মা বলেন, “খোলার আগে আমরা পুরো চত্বরে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করেছি। সংখ্যায় কম হলেও ক্রেতারা আসছেন। প্রত্যেকের মাস্ক ও গ্লাভস পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, যাঁরা পরে আসছেন না, তাঁদের তাঁরাই গ্লাভস দিচ্ছেন। হাতে ‘স্যানিটাইজ়ার’ দেওয়া ও ‘থার্মাল স্ক্রিনিং’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মীরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে যোগ দিয়েছেন। শহরের খাবার হোটেলগুলির অধিকাংশই এ দিন বন্ধ ছিল। রসিকগঞ্জের একটি হোটেলের পক্ষ থেকে সঞ্জয় দাস বলেন, “হোটেল খুলেছি। রান্নাও হয়েছে। তবে খাবার লোক নেই। এ ভাবে প্রতিদিন খাবার নষ্ট করা যাবে না। তাই ভাবছি, সব স্বাভাবিক না হলে হোটেল আদৌ খুলব কি না।’’

খাতড়া

৭০ শতাংশ কর্মী নিয়ে সোমবার থেকে সরকারি দফতরগুলি চালু রাখতে বলা হয়েছে। মহকুমাশাসক (খাতড়া) রবিরঞ্জন জানান, খাতড়ার সরকারি দফতরগুলিতে এ দিন প্রায় ৬৫ শতাংশ কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘স্বাভাবিকের তুলনায় হাজিরা একটু কম হলেও দফতরগুলিতে কাজ হয়েছে।’’ এ দিন মহকুমাশাসকের দফতরের পাশাপাশি, তুলনায় বেশি কর্মী নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে আটটি ব্লকের সরকারি দফতরগুলিতেও। কিন্তু সাধারণ মানুষের উপস্থিতি সে ভাবে ছিল না। খাতড়া বাজার, মুকুটমণিপুর, তালড্যাংরা বাজার, ইঁদপুরের বাংলা বাজার-সহ মহকুমা এলাকার ছোট বাজারগুলি প্রায় ফাঁকা ছিল। ইঁদপুরের বাংলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রবিশঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘সকাল থেকেই বাংলা বাজারে সে রকম ভিড় ছিল না। ব্যবসায়ীদের বিক্রিবাটাও সে রকম হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement