মোবাইল আঁকড়ে শুকরামের স্ত্রী ও মা। নিজস্ব চিত্র
দিনটা ছিল ২৩ এপ্রিল। বান্দোয়ানের কুচিয়া গ্রামের বাড়িতে ছিলেন বৃদ্ধ কোকা মান্ডি ও তাঁর স্ত্রী গুরুমণি। অভিযোগ, কোকার বেয়াই পরমেশ্বর মত্ত অবস্থায় তাঁদের উপরে চড়াও হয়। গুরুমণি ছিটকে বেরিয়ে গেলেও কোকা পারেননি। তাঁর মাথায় কুড়ুলের কোপ পড়ে। সেই ঘটনার পর থেকে পরমেশ্বর জেলে। আর হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে কোকা গত পঁয়তাল্লিশ দিন ধরে রয়েছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মাথায় অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু সেটা কবে, কখন— এই ডামাডোলের মধ্যে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁর পরিজনেরা।
ছেলে, বৌমা, এক বছরের নাতিকে নিয়ে থাকেন ওই দম্পতি। অল্প জমি আছে। চাষ করে কয়েক মাসের চাল হয়। পরিবারে রোজগেরে বলতে শুধু কোকার ছেলে শুকরাম। দিনমজুরি করেন। তিনি এখন বাবাকে নিয়ে কলকাতায়। ফোনে জানালেন, ঘটনার পরেই নিয়ে বাবাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বান্দোয়ান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখান থেকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল। তার পরে এক প্রকার মরিয়া হয়ে সেখান থেকে নিয়ে যান ঝাড়খণ্ডের বোকারোর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অল্প যা কিছু সঞ্চয় ছিল, বেসরকারি চিকিৎসার খরচে সেটা তলানিতে এসে ঠেকে। বাধ্য হয়ে বাবাকে নিয়ে ফিরে আসেন। ভর্তি করান বাঁকুড়া মেডিক্যালে। সেখান থেকে রেফার করা হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে।
বৃহস্পতিবার কোকার বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেল, দাওয়ায় বসে মহুলের বীজের খোসা ছাড়াচ্ছেন গুরুমণি। ওই বীজ ভাঙিয়ে তেলটুকু হয়। না হলে, হাটে বেচে ক’টা টাকা আসে। গ্রামের প্রান্তে কুয়ারডির মাটির বাড়িটায় সদর দরজা বলে কিছু নেই। ঢুকতেই দু’টো কামরা। একটায় টালির চাল। তাতে দরজা আছে। খাট, বিছানা, চাল— এই সমস্ত থাকে। অন্য ঘরে খড়ের চাল। দরজা নেই।
গাছের নীচে খাটিয়ায় ছেলেকে নিয়ে বসেছিলেন শুকরামের স্ত্রী। তিনিও উঠে এলেন। শাশুড়ি এবং বৌমা জানালেন, রোগী কেমন আছে তাঁরা জানেন না। বলেন, ‘‘কলকাতায় ডাক্তারদের কী একটা গন্ডগোল হচ্ছে বলে শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না।’’ ফোনে মাঝেমধ্যে শুকরামের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁদের। কিন্তু তাতে চিন্তা বাড়া ছাড়া আর কিছু হয়নি। চিন্তা হচ্ছে কোকার জন্য। চিন্তা হচ্ছে শুকরামের জন্যও।
পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য বাইরে। ঘরে আছে কিছুটা চাল। বৃদ্ধা গুরুমণি বলেন, ‘‘আমাদের এমনিতেই কষ্টের জীবন। সেটাও কী রকম জটিল হয়ে গেল। এর পরে কী হতে চলেছে, কিচ্ছু জানি না।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।