পাইকর হাসপাতালের ছবি। জরুরি বিভাগে নেই কোন চিকিৎসক, মেছেতে শুয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নিচ্ছেন অনেকেই। —নিজস্ব চিত্র।
অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য কয়েকশো রোগী দাঁড়িয়ে বহির্বিভাগে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকলেও জরুরি বিভাগে কোনও চিকিৎসক না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কষ্ট পেলেন বহু রোগী।
বুধবারের এই ছবি পাইকর হাসপাতালের। দিন কয়েক ধরে মুরারই ২ ব্লক জুড়ে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন ন’টি পঞ্চায়েতের বহু গ্রামের মানুষজন। প্রথমে সর্দি ও কাশি পরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর ও শরীরে ব্যথা। এই উপসর্গ নিয়ে পাইকর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকেই। এই অবস্থায় হাসপাতালে পরিষেবা না পেয়ে সমস্যায় পড়ছেন রোগী ও তাঁদের পরিবার।
এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের সব শয্যায় ভর্তি। এক দিনের শিশু থেকে অনেকেই মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নিচ্ছেন। মেঝেতেও জায়গা না পেয়ে কয়েক জন সিঁড়িতে কোনও রকম বসে স্যালাইন নিচ্ছেন। রোগীর পরিবারের অনেকেই জানান, সকাল থেকে কোনও চিকিৎসক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেননি। নার্সদের বললে তাঁরা রামপুরহাট বা অন্য হাসপাতালে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে ক্ষোভ অসুস্থদের পরিজনদের।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, ব্লকের অধিকাংশ বাসিন্দাই দুঃস্থ। গাড়ি ভাড়া করে হাসপাতালে যাওয়ার সামর্থ্য নেই বহু রোগীর। তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাচ্ছেন অনেকেই। হাসপাতালের এই অবস্থা দেখে মুরারই ২ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ কবিরুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি মিনিট পনেরোর মধ্যে হাসপাতালে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘দুই চিকিৎসক ট্রেনিং নিতে সিএমওএইচ অফিস গিয়েছেন। তাই যে চিকিৎসক বহির্বিভাগে কর্তব্যরত তিনি জরুরি বিভাগও দেখছেন। কী কারনে এই জ্বর তার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনেক রোগীর টাইফয়েড ধরা পড়ছে।’’এই পরিস্থিতিতে আরও চিকিৎসক না দিয়ে কেন দু’জনকে প্রশিক্ষণে পাঠানো হল? স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’
পাইকর হাসপাতালে ভর্তি রোগী রামিজরেজা মোল্লা বলেন, ‘‘হাসপাতালে চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। নার্সদের ব্যবহার ভাল নয়। বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।’’ বাহারাম শেখের ক্ষোভ, ‘‘অনেক রোগী চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। সরকারি চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে এসে এই অব্যবস্থার জন্য দুঃস্থ মানুষজন সমস্যায় পড়েছেন।’’ রামপুরহাট মহকুমা শাসক সাদ্দাম নাভাস বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না। স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করা হবে।’’