দুলমিতে বন্ধ দলীয় অফিসের বাইরে তৃণমূল কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
জেলা সভাপতি বদল হতেই তালা পড়েছে তৃণমূলের বর্তমান জেলা কার্যালয়ে। গত সোমবার বিকেলের পর থেকে পুরুলিয়া-জামশেদপুর (৩২ নম্বর) জাতীয় সড়কের ধারে, পুরুলিয়া শহরের দুলমি এলাকায় থাকা কার্যালয়ে তালা ঝুলছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
ঘটনার জেরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। অনেকে বিভিন্ন নেতাদের ফোন করে কার্যালয় বন্ধের কারণও জানতে চেয়েছেন। মনসাপুজোর জন্য কার্যালয় বন্ধ বলে পরিস্থিতি সামাল দিলেও অস্বস্তি এড়াতে পারছেন না দলের শীর্ষ নেতারা। কার্যালয় বন্ধ ঘিরে চাপানউতোরের আভাস মিলেছে বর্তমান ও প্রাক্তন জেলা সভাপতির বক্তব্যেও।
দলের প্রবীণ নেতা-কর্মীদের একাংশের মতে, জেলা সভাপতি পদে রদবদলের সঙ্গে সঙ্গে জেলা কার্যালয়ের ঠিকানা বদলের বিষয়টি নতুন নয়। অনেকের সরস মন্তব্য, ‘‘সভাপতি বদল মানেই নতুন অফিস খুঁজতে হবে। অফিসের জন্য দরকারে বিজ্ঞাপনও দিতে হবে।’’ নিছক রসিকতা বলে মানলেও তা যে ভুল নয়, মানছেন দলের নেতৃত্ব স্থানীয়দের অনেকে।
তৃণমূল প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকে কেপি সিংহদেও জেলা সভাপতি থাকাকালীন বাড়ির বৈঠকখানার সঙ্গে শহরের বিটি সরকার রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে কাজকর্ম পরিচালিত হত। ২০০৯-এর অগস্টে তাঁকে সরিয়ে জেলা সভাপতি করা হয় কংগ্রেস ছেড়ে আসা শান্তিরাম মাহাতোকে। তাঁর সময়ে বিটি সরকার রোড থেকে দলীয় কার্যালয় সরে যায় ওই রাস্তাতেই থাকা দলের প্রয়াত নেতা সীতারাম মাহাতোর বাসভবনে। গত বছরে গুরুপদ টুডু জেলা সভাপতির দায়িত্বে আসার পরে, সে কার্যালয়ে তালা পড়ে। নতুন কার্যালয় গড়ে ওঠে শহরের দুলমি এলাকায়।
দলের নবনিযুক্ত জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার কথায়, ‘‘এত দিন যিনি দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন, তিনিই কার্যালয়টি চালু করেছিলেন। কর্মীদের কাছে সেটিই দলীয় কার্যালয় হিসেবে পরিচিত। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। আমি গুরুপদবাবুর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। কার্যালয়ের জন্য নতুন জায়গার খোঁজ চলছে।’’
সদ্যপ্রাক্তন জেলা সভাপতি গুরুপদবাবু বলেন, ‘‘আমি যখন জেলা সভাপতি হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম, সে সময়ে কোনও জেলা কার্যালয় পাইনি। ওই বাড়িটি আমাকেই খুঁজে নিতে হয়েছিল। দলের সঙ্গে নয়, বাড়িটির জন্য আমার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। আমি সেখান থেকে কাজ চালাতাম।’’ এর বেশি কিছু বলতে না চাইলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তিনি পদে নেই, তাই কার্যালয়ও বন্ধ।
ঘটনা প্রসঙ্গে জেলার বরিষ্ঠ নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলের জেলা কার্যালয় হলেও সেটির ভাড়া গুরুপদবাবু নিজেই মেটাতেন। আসবাবপত্র যা রয়েছে, তা-ও উনি কিনেছিলেন। সমস্যা মেটাতে প্রাক্তন ও বর্তমান জেলা সভাপতির মধ্যে আলোচনা দরকার। প্রয়োজনে, মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে পারি।’’