ভাঙা চেয়ার। নিজস্ব চিত্র
মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই বিক্ষোভের আঁচ ছিল বিজেপির অন্দরমহলে। এ বার সেই বিক্ষোভ আছড়ে পড়ল দলের বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক কার্যালয়ে।
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষের পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার দলের কয়েকশো কর্মী বিক্ষোভ দেখান জেলা কার্যালয়ের সামনে। আবার বিজেপির ছাতনা ১ মণ্ডলের সভাপতি পদ থেকে জীবন মণ্ডলের অপসারণ চেয়ে এ দিনই দুপুরে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের সাংসদীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান ওই মণ্ডলের বেশ কিছু নেতা-কর্মী।
বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুরে বিক্ষোভকারী বিজেপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মণ্ডল সভাপতি নির্বাচনে গুরুত্ব পায়নি বুথ সভাপতিদের মতামত। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে মণ্ডল সভাপতি ঠিক করা হয়েছে। বিক্ষোভের জেরে বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে দিতে হয়। এর পরেই বিজেপির দু’পক্ষের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। উত্তেজনা ছড়ানোয় ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের বিশাল বাহিনী।
বিষ্ণুপুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া পাত্রসায়রের বিজেপি নেতা নিখিল কর্মকারের অভিযোগ, “বুথ সভাপতি এবং সাধারণ কর্মীদের মতামতকে আমল না দিয়ে জেলা সভাপতি নিজের পছন্দের লোকদের মণ্ডল সভাপতির পদে বসিয়েছেন। মণ্ডল সভাপতিদের তালিকা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’ আর এক বিজেপি নেতা পুরঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মণ্ডল সভাপতিদের তালিকা বাতিলের প্রতিশ্রুতি পেয়ে বিক্ষোভ তুলে নিয়েছি। তবে ফের বেচাল দেখলে আমরা তা মেনে নেব না।” স্বপনবাবুর মন্তব্য, “মণ্ডল সভাপতি নির্বাচনে আমার যে কোনও ভূমিকা নেই তা সকলের জানা উচিত। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে বুথ সভাপতি ও মণ্ডল সভাপতি পদে নির্বাচন হয়।’’
সম্প্রতি বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার অধীনে থাকা ২২টি মণ্ডলের সভাপতির নাম ঘোষণা করেন জেলা নেতৃত্ব। বিজেপি কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, জেলা সভাপতি নিজের পছন্দের নেতাদের মণ্ডল সভাপতির পদে বসিয়েছেন। পাত্রসায়র, সোনামুখী, ইন্দাসে ইতিমধ্যেই কয়েকজন নেতা ঘোষণা করেছেন, আগামী ১৫ ডিসেম্বর তাঁরা জেলা কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন। তাঁদেরও নিশানায় সেই জেলা সভাপতি। যদিও স্বপনবাবুর গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন নিয়ম মেনে হয়েছে।
ছাতনা ১ মণ্ডলের বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা-কর্মীদের আবার দাবি, মণ্ডল সভাপতি পদ থেকে সরাতে হবে জীবনবাবুকে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন মণ্ডলের সদ্য প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক উদিতেন্দু সেনগুপ্ত। তাঁর অভিযোগ, ‘‘জীবনবাবু সদ্য বিজেপিতে এসেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে মাঝেমধ্যেই। তাঁকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’’ জীবনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দল মনে করেছে বলেই আমাকে মণ্ডল সভাপতি করেছে। এ নিয়ে কে কী বললেন, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’ তাঁর দাবি, সাত বছর ধরে তিনি বিজেপি করছেন। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত মেনে সকলে কাজ করবে। সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কিছু প্রশ্ন ওঠে। দলের স্বার্থেই প্রত্যেককে কাজ করতে হয়।’’