Kota Student Death

কোটায় জেলার অনেক পড়ুয়া, উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা

রামপুরহাট থেকে কোটায় যাওয়া আর এক পড়ুয়ারা দাদু বীরেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “নাতি বছর দেড়েক হল কোচিং নেওয়ার জন্য কোটায় গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট  শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২৫
Share:

নলহাটিতে ফরিদের বাড়িতে পরিজনদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভিন্‌ রাজ্যে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পাড়ি দিয়েছিল নলহাটির ফরিদ হুসেন। রাজস্থানের কোটায় ভাড়াবাড়ি থেকে ওই যুবকের দেহ উদ্ধারের পর আতঙ্কে জেলার বহু অভিভাবকই। মনোবিদেরা বলছেন, পড়ুয়ার সামান্য কোনও সমস্যা হলেও তা গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে অভিভাবকদের।

Advertisement

আতঙ্ক হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ ফরিদকে নিয়ে এই বছরে ২৮ জন পড়ুয়ার অপমৃত্যু হয়েছে কোটায়। দেশের নানা জায়গা থেকে ওই পড়ুয়ারা কোটার কোচিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিল। প্রত্যাশার চাপ ও ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা— এই দুইয়ের চাপেই তারা প্রাণঘাতী অবসাদে ডুবে গিয়েছিল কি না তা নিয়েই চিন্তিত জেলার বহু অভিভাবক। কারণ, বীরভূমের বহু পড়ুয়া এখনও কোটায় প্রশিক্ষণরত।

এ দিন সকাল থেকেই কোটায় থাকা ছেলেমেয়েকে ফোন করে মনের অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন সেই সব অভিভাবকেরা। অভিভাবকদের একাংশ জানান, রামপুরহাট মহকুমা ছাড়াও জেলার বহু ছাত্রছাত্রী নিট পরীক্ষার জন্য কোটায় আছেন। প্রথম এক বছর পরিবেশ ও পড়ার চাপে মানিয়ে নিতে পড়ুয়াদের কষ্ট হয় বলে তাঁরা জানান। বিশেষ করল বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের বেশি সমস্যা হয় বলে তাঁদের দাবি।

Advertisement

অনেকের দাবি, দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মানসিক চাপ আরও বেশি। কারণ তাঁদের অভিভাবকরা কষ্ট করে টাকা জমিয়ে ছেলেমেয়েকে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার করার আশায় কোটায় পাঠিয়ে থাকেন। তাই সাফল্য না এসে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাবে কি না, কোন মুখে তাঁরা বাড়ি ফিরবেন তেমন নানা আশঙ্কাতেও অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন বলে মত শিক্ষাবিদদের। অভিভাবকেরা দাবি করছেন, কোটার কোচিং সেন্টারগুলির ছাত্রছাত্রীর মানসিক অবস্থার বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার।

রামপুরহাটের এক বাসিন্দা বলেন, “ছেলে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে কোটায় ভর্তি করেছি। দু’বছর হয়ে গেল। এ দিনের খবর শুনে কিছুটা হলেও আমরা আতঙ্কিত। ছেলে দু’বছরে মাত্র দু’বার বাড়িতে এসেছে। সকালে ফোন করে ছেলের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছি।’’ তাঁর মতে, প্রত্যেকদিন ছেলেমেয়ের সঙ্গে অভিভাবকেরা কথা বললে, সাহস দিলে পড়ুয়াদের আতঙ্ক কমবে।

রামপুরহাট থেকে কোটায় যাওয়া আর এক পড়ুয়ারা দাদু বীরেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “নাতি বছর দেড়েক হল কোচিং নেওয়ার জন্য কোটায় গিয়েছে। যা ঘটেছে তাতে ভয় হচ্ছে। এর থেকে কলকাতায় কোচিং নিলে ভাল হত। ছেলের সঙ্গে কথা বলে কোটা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করব। আমাদের ভয় হওয়া স্বাভাবিক।’’

সিউড়ি জেলা হাসপাতালের মনোবিদ সুকন্যা ঘোষ বলেন, ‘‘আত্মহত্যা মুহূর্তের সিদ্ধান্ত। কিন্তু যিনি আত্মহত্যা করছেন, তাঁর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকে। তাঁর মনের অবস্থার কিছু বহিঃপ্রকাশও থাকে। এমন কোনও কথা কেউ যদি বলেন, সেটাকে কথার কথা মনে না করেন কেন তিনি এমনটা বলছেন তা শোনা উচিত। সেটাতে যদি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যদি নিকট আত্মীয়স্বজন মন দিয়ে তাঁর কথা শোনেন, তাহলে এই পরিস্থিতি পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement