—প্রতীকী চিত্র।
২১ ফেব্রুয়ারি নয়, পয়লা মার্চ একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বকেয়া মজুরি দিয়ে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় এমনই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে বাড়ি বাড়ি ঘুরে শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার কাজ চলছিল। তখনই উত্তপ্ত হয়ে উঠল পরিস্থিতি। অভিযোগ, গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক এবং পঞ্চায়েতে সহায়ক। তাঁদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ঘটনাটি ঘটেছে খয়রাশোল হজরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রসা গ্রামে। এলাকাটি কাঁকরতলা থানা এলাকায় পড়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন হজরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক দেবাশিস মিশ্র এবং সহায়ক ধনঞ্জয় সরকার। খবর পেয়ে ঘটনাস্থালে পৌঁছয় পুলিশ। আক্রান্ত কর্মীদের নাকড়াকোন্দা ব্লক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার করানোর পরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই লিখিত অভিযোগ করেন নির্মাণ সহায়ক।
তবে কার কার নামে অভিযোগ করেছেন সে ব্যাপারে খোলসা করতে চাননি তিনি। তবে দুই কর্মীই জানান, অত্যন্ত খারাপ অভিজ্ঞতা। কাঁকরতলা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট করেই অভিযোগ হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অন্য দিকে, তৃণমূলের দাবি বিজেপির ইন্ধনেই গোটা ঘটনাটি ঘটেছে।
খয়রাশোলের বিডিও সৌম্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় ফোন ধরেননি। মোবাইল পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি। তবে ‘এমজিএনআরইজিএ’ সেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাকে কেউ বিষয়টি জানাননি। নিশ্চয়ই খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্র বকেয়া না মেটালে রাজ্যের ২১ লক্ষ জবকার্ড ধারীর প্রাপ্য টাকা ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্য সরকার মেটাবে বলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই জেলার জুড়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সেই তারিখ পিছিয়ে পয়লা মার্চ করেছেন। পঞ্চায়েত, ব্লক ও জেলা প্রশাসন স্তরের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১০০ দিনের কাজের নিরীক্ষণ করছেন। মজুরি মেটানোর গোটা প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা’ বজায় রাখতে শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাচাই করতে বলা হয়েছিল।
জেলা জুড়ে অন্যান্য পঞ্চায়েতের মতো ‘ফান্ড ট্রান্সফার অর্ডার’ দেখে ‘ড্রাফ্ট ওয়েজ পেমেন্ট লিস্ট’ (মজুরি মেটানো সংক্রান্ত খসড়া তালিকা) তৈরি করে সেই তালিকা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি যাচাই পর্ব চলছিল হজরতপুরের রসা গ্রামেও।
জানা গিয়েছে, দুই গ্রাম সম্পদ কর্মীকে নিয়ে এ দিন রসা ৪১ নম্বর সংসদে বাড়ি বাড়ি ঘুরছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েত সহায়ক ধনঞ্জয়। তাঁর কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবারই যাচাই পর্ব শেষ করার কথা ছিল। চার জন জবকার্ডধারীর বাড়ি যাচাই পর্ব বাকি ছিল। তাঁদের মধ্যে এক জন মারা গিয়েছেন। দুই সম্পদকর্মী অন্য দিকে গেলে আমি গ্রামের এক জনকে তাঁদের বাড়ি দেখিয়ে দিতে বলি। কাকতালীয় ভাবে তিনি শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত। তার পরেই কেন শাসকদলের লোকেদের নিয়ে জবকার্ড ভেরিফিকেশন হচ্ছে প্রশ্ন তুলে কিছু লোক আমার উপর চড়াও হন। আমাকে মারধর করতে থাকেন।’’
জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের একটি নির্মীয়মাণ নিকাশি নালার কাজ দেখে ওই পথে ফিরছিলেন নির্মাণ সহায়ক দেবাশিস মিশ্র। তিনি মোটরবাইকে থামিয়ে সহায়ককে তুলতে চাইলে লাঠি দিয়ে তাঁরও মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, ওই গ্রামে পঞ্চায়েতের ১৪ আসনের আটটি পেয়ে ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত এলাকার তিনটি পঞ্চায়েত সমিতি সদস্যের মধ্যে এক জন এবং তিন জন বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ওই গ্রামের। তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘কাজ হচ্ছে বিডিওর নির্দেশ। এখানে দলের কেউ ছিলেন না। যেটুকু শুনেছি হামলা হয়েছে বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য মন্ত্রীরাম ঘোষের নেতৃত্বে।’’ মন্ত্রীরাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘দল আসছে কেন। শাসকদলের নেতাদের নিয়ে কাজ হচ্ছিল বলে গ্রামের মানুষ ক্ষুব্ধ। সেই থেকে ঠেলাঠেলি হয়েছে।’’