রাস্তা সংস্কারের কাজকে প্রচারে তুলে আনতে উদ্যোগী জেলা তৃণমূল। প্রতীকী চিত্র।
রাজ্য সরকারের কল্যাণমূলক কাজের প্রচার চাই— সম্প্রতি কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে এই বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনা হল, প্রচারের অভাবেই যে পুরুলিয়ায় রাজ্য সরকারের কল্যাণমূলক কাজের ফসল দল তুলতে পারছে না, মঙ্গলবারের তৃণমূলের পর্যালোচনা বৈঠকেও তা উঠে এসেছে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জেলা জুড়ে এক গুচ্ছ গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণের কাজের সূচনা অনুষ্ঠানগুলিকে প্রচারের জন্য পাখির চোখ করার সিদ্ধান্ত নিল পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল।
শীঘ্রই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২১টি গ্রামীণ রাস্তা তৈরি করতে চলেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। সূত্রের খবর, দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে গিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব যে রাস্তাগুলি নিয়ে স্থানীয়দের কাছে অভিযোগ পেয়েছেন, তার অনেকগুলিই নির্মীয়মাণ রাস্তার তালিকায় রয়েছে। তাই ওই রাস্তাগুলির কাজ শুরুর দিন এলাকায় যাতে দলের কথা ভাল ভাবে প্রচার করা হয়, সে জন্য সেখানে নেতা-কর্মীদের ভাল সংখ্যায় জমায়েতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবারের তৃণমূলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, পথশ্রী প্রকল্পে রাস্তার গড়ার কাজে প্রতিটি জায়গাতেই অন্তত ৫০০ লোকের জমায়েতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্লক নেতৃত্বকে। তার মধ্যে যাতে অর্ধেক মহিলা থাকেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, সরকারি তরফে যে অনুষ্ঠান হবে তার কাছাকাছি এলাকায় দলের প্রতীক দিয়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ধন্যবাদজ্ঞাপক একটি ব্যানার রাখতে হবে। সেই ব্যানারে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখতে হবে। তবে ওই ব্যানার সরকারি ব্যানারের থেকে আলাদা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট রাস্তাটি কোথা থেকে কোথা পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে, তা ঢালাই না পিচের হবে, উল্লেখ করতে হবে। অনুমোদিত রাস্তায় দলীয় পতাকা এবং ব্যানার রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি অনুষ্ঠান থেকে দূরত্ব মেনে চলার কথাও বলা হয়েছে। প্রতিটি জায়গায় স্থানীয় নেতৃত্বকে হাজির থাকবেন।
জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘চলতি মাসের শেষের দিকে একই দিনে তালিকায় থাকা জেলার সমস্ত রাস্তার কাজের সূচনা হবে। স্থানীয় বাসিন্দারাই এই রাস্তাগুলি গড়ার দাবি জানিয়েছিলেন। তাই প্রতিটি জায়গাতেই রাস্তাগুলির গুরুত্ব রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই কাজের সূচনার সময়ে জমায়েতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতে এলাকায় যে রাজ্য সরকার কাজ করছে, তা নিয়ে মানুষজনের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়। এই রাস্তাগুলি এলাকার সম্পদ। সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এই রাস্তাগুলি তৈরির জন্য দলের তরফেও মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হবে।’’
উন্নয়নমূলক কাজকে স্বাগত জানালেও সরকারি কাজের জায়গায় দলতন্ত্রকরণ নিয়ে শাসক দলকে বিঁধেছেন বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গা বলেন, ‘‘সরকারি কাজের সূচনায় এ ভাবে দলের প্রচার আগে কি হয়েছে? তৃণমূলও বুঝতে পারছে গ্রামে তাদের সংগঠনে ধ্বস নেমেছে। তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে সরকারি কাজকে এ ভাবে হাতিয়ার করতে হচ্ছে। তবে এ সব করেও বিশেষ সুবিধা পাবে না।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, ‘‘সরকারি কর্মসূচি ও দলীয় কর্মসূচিকে একাকার করে ফেলছে তৃণমূল। দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের যে ভাবমূর্তি রাজ্যে তৈরি হয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামে রাস্তা নির্মাণের এই প্রকল্পকে ঘিরে তা উদ্ধার করতে চাইছে তৃণমূল। এ ভাবে দুর্নীতি কতটা ঢাকা দেওয়া যাবে?’’ এই রাস্তা নির্মাণ ঘিরে ফের কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ উঠবে না তো— এমন প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধীরা।
অভিযোগ অস্বীকার করে সৌমেন বলেন, ‘‘দল ও সরকারের কাজে ফারাকের কথা বিজেপির মুখে মানায় না। রেলের অনুষ্ঠানগুলিতে আমরা কী দেখছি? কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা সত্ত্বেও গ্রামের মানুষের চাহিদা মেনে এই রাস্তাগুলি রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকেই করছে।’’