বিষ্ণুপুরের জ্যামরা মোড়ে দ্বারকেশ্বর বালি তোলা চলছে। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। আর্থিক বছরও শেষ হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুত সারতে প্রশাসন নির্দেশ দিলেও বালির দর আকাশ ছোঁয়ায় সমস্যায় পড়েছে পঞ্চায়েতগুলি। সাধারণ মানুষও বাড়ি-ঘর তৈরির কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, বালিঘাটের লিজ় দেওয়ার পদ্ধতিগত জটিলতাতেই অনেকে লিজ় নিতে আগ্রহী নন। সে কারণে বালির জোগান কমেছে। অন্য দিকে, এই পরিস্থিতিতে অসাধু লোকজন বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন নদী থেকে বালি চুরি চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু বলেন, ‘‘বালির জোগানের ঘাটতি রয়েছে। সরকারি কাজে এ নিয়ে সমস্যা যেখানেই হচ্ছে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে মেটানোর চেষ্টা করছি।’’ আগে বালির লিজ় দেওয়ার দায়িত্ব ছিল ভূমি দফতরের। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) এস প্রিয়দর্শিনীর আশ্বাস, “সরকারি প্রকল্পের জন্য চাহিদা মতো বালি জোগান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বালির অবৈধ কারবার রুখতে কড়া নজর রাখা হয়েছে।”
আগে বৈধ বালিঘাট থেকে বালি তোলা নিয়েও বেনিয়মের নানা অভিযোগ উঠত। প্রশাসন সূত্রে খবর, বছর দুয়েক আগে বালিঘাটের লিজ় বন্টনের ক্ষমতা জেলা প্রশাসনের বদলে তুলে দেওয়া হয় ওয়েস্টবেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের হাতে। পুরনো লিজ় প্রাপকদের একাংশের দাবি, এখন লিজ় নিতে গেলে তথ্যগত অনেক জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সে কারণে অনেকেই বালি খাদানের লিজ় নিতে আগ্রহী নয়। আর তার জেরেই বালির জোগানে ঘাটতি হচ্ছে।
জেলার এক বিডিও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজ করতে গিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে বালি না পাওয়ায় কাজের গতি কমছে। চড়া দরে বালি কিনতে হচ্ছে বলে নানা প্রকল্পের কাজে ঢিলেমি করছেন ঠিকাদারদের একাংশ। সমস্যার কথা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
এ কারণে পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজও আটকে রয়েছে বলে দাবি বহু প্রধানের। এমনকি ঠিকা সংস্থাগুলিও টেন্ডারে যোগ দিতে চাইছেন না বলে দাবি করছেন তাঁরা। বিষ্ণুপুর ব্লকের অযোধ্যা পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , “বালি দাম অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাট, কালভার্ট বা অন্যান্য নির্মাণ কাজে ঠিকাদারেরা অংশ নিচ্ছেন না। বালির ঘাটতির জেরে পিছিয়ে পড়ছে পঞ্চায়েতের পরিকল্পনাও।” বিষ্ণুপুরের ঠিকাদারদের পক্ষে দেবনাথ কর বলেন , “হাতে নেওয়া কাজের কেবল ১০ শতাংশই চালাতে পারছি। বালির অভাবে সরকারি কাজ ধরতে ভরসা পাচ্ছি না।”
একই কারণে নির্মাণ শিল্প ধুঁকতে থাকায় কাজ হারিয়েছেন অনেকেই। বিষ্ণুপুর ব্লকের মড়ার পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের অরুণ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার এলাকায় নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা বহু। বালির অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় তাঁরা কাজ না পেয়ে বাড়িতে বসে আছেন। এ ভাবে চললে এলাকার মানুষ বাধ্য হয়ে ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে যাবেন।”
বালির অভাবে নির্মাণ কাজ কম হওয়ায় ইটের চাহিদাও তলানিতে ঠেকেছে। ‘বাঁকুড়া জেলা ইটভাটা সুরক্ষা সমিতি’-র সম্পাদক জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, “চড়া দরে বালি কিনে বাড়ি বানাতে চাইছেন না সাধারণ মানুষ। ফলে নির্মাণ কাজ প্রায় বন্ধ। ইট বিক্রিও স্বাভাবিক ভাবে কমে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছি আমরা। বহু ইটভাটা শ্রমিক কাজ না পেয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।”
বালির সঙ্কটে অবৈধ কারবারিদের রমরমা বাড়ছে বলেও অভিযোগ। বিষ্ণুপুরের দ্বারকেশ্বর নদের বনমালীপুর, ভাটরা, চাকদহ, মুণ্ডমালা ঘাট থেকে ইঞ্জিন ভ্যান ও গরুর গাড়িতে যথেচ্ছ বালি পাচার হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। বালির জোগান না থাকায় অগত্যা অনেকেই চড়া দরে বালি কিনছেন।
সবার দাবি, সমস্যা মেটাতে সক্রিয় হোক প্রশাসন।