অভিষেক মঞ্চে ওঠার আগে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওন্দার জনসভা ‘মেগা ইভেন্ট’ হবে বলে দাবি করেছিলেন বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল নেৃতৃত্ব। কিন্তু বুধবার সভা শেষে ভিড় নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। তৃণমূলের অন্দরেও যা নিয়ে দানাবেঁধেছে অস্বস্তি।
দু’বছর পরে বুধবার বাঁকুড়া জেলায় দলীয় সভা করলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওন্দার স্টেডিয়ামে আয়োজিত ওই সভায় উপচে পড়া ভিড় জমাতে সব রকমের তৎপরতা ছিল তৃণমূলের। দলের তরফে দাবি করা হয়েছিল, অন্তত ৫০ হাজার ভিড় হবে। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা কতটা পূরণ হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। এক্ষেত্রে দলের অস্বস্তি বাড়িছে তৃণমূল নেত্রী সুজাতা মণ্ডলের মন্তব্যও। অভিষেক সভামঞ্চে থাকাকালীনই সুজাতা বক্তৃতায় বলেন, ‘‘রোজার মাস বা নীল ষষ্ঠী না থাকলে এখানে পা ফেলার জায়গা থাকত না। দাদাকে কথা দিচ্ছি, এরপরে তিনি যখন জেলায় আসবেন একটা ধুলোও দেখা যাবে না।’’ বিরোধীদের কটাক্ষ, সুজাতার মন্তব্যেই পরিষ্কার তৃণমূলের সভায় আশানরূপ ভিড় হয়নি।
এ দিন দুর্গাপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কটাক্ষ করেন, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জোর করে সভায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তা নাহলে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ হয়ে যাবে। লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়েও ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে। তারপরেও সভা ফাঁকা থাকছে।’’ যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব ভিড় কম হয়েছে বলে মানেননি। দলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘অন্তত ৪২ হাজার মানুষ সভাস্থলে ছিলেন। আরও বহু মানুষ সভাস্থলের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন।’’ পুলিশের দাবি, এ দিনের সভায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বিরোধীদের দাবি, এ দিন সভা শুরুর মুখে মঞ্চের সামনের অনেকখানি জায়গা শূন্য ছিল। তবে অভিষেক মঞ্চে ওঠার আগে পিছন থেকে মহিলাদের এনে সেই জায়গায় বসানো হয়। তাতেও ফাঁক পুরোপুরি ভরেনি। ওন্দার বিজেপি বিধায়ক অমরনাথ শাখার কটাক্ষ, “অভিষেকের সভা ফ্লপ হয়েছে। ১০ হাজার লোকও হয়নি ওই সভায়। এই তীব্র গরমে ওদের নেতা চপারে যাওয়া-আসা করবেন বলে ভরদুপুরে সভা করলেন। সভায় আসা মানুষের কষ্টের কথা ভাবলেন না। গোটা জেলায় যানজট ছড়িয়ে পড়েছিল।” সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির দাবি, “বর্ধমান, আসানসোল থেকে লোক এনেও অভিষেকের সভাস্থল ভরাতে পারেনি তৃণমূল। মানুষের আস্থা ওদের উপর থেকে উঠে গিয়েছে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি অলোক বলেন, “অভিষেকের সভায় মাঠ পরিপূর্ণ ছিল। বাইরেও অনেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন। হেলিপ্যাডেও ভিড় ছিল। সভার ভিড় দেখে বিরোধীরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে বলেই উল্টোপাল্টা বকছেন।’’
তবে এ দিন জেলার অনেক জায়গাতেই বাস অত্যন্ত কম থাকায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষজন। এ দিন দুর্গাপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এ ভাবেই তো সভা হচ্ছে। কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে বাসের ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। আসলে ভিতরে কী হচ্ছে, কেউ জানে না। যে দিন অডিট রিপোর্ট বেরোবে, সে দিন জানতে পারব।’’