Indian Railways

শহরতলির লোকাল চালু, আশায় জেলার হকারেরা

শহরতলির লোকাল চালু হচ্ছে কাল, বুধবার থেকে। বীরভূমের উপর দিয়ে লোকাল ট্রেন চালু হলে ফের পুরনো পেশায় ফিপকতে পারবেন, অভাব কিছুটা হলেও ঘুচবে—এই আশায় বুক বেঁধেছেন নকুল, সাবু, মুন্নারা।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ 

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪৭
Share:

প্রস্তুতি: সোমবার সিউড়ি স্টেশনে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

কেউ ট্রেনে, কেউ স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে চা, ঝালমুড়ি, জলের বোতল-সহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে সংসার চালিয়েছেন। লকডাউনের জেরে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়া ইস্তক প্রায় ৮ মাস জীবিকা হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছেন তাঁরা। এই অবস্থায় শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে শহরতলির লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার ঘোষণার পরে জীবিকা ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন বীরভূমের হকারেরা।

Advertisement

এই জেলার উপর দিয়ে মূলত রামপুরহাট-হাওড়া, রামপুরহাট-আজিমগঞ্জ, সাঁইথিয়া-অন্ডাল সহ বিহার ও ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগকারী রেলপথ গিয়েছে। ওইসব রেলপথে চলাচলকারী ট্রেনে হকারি করে এবং স্টেশনে দোকান চালিয়ে পুরুষানুক্রমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে বহু পরিবার। বাম প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ে হকার্স ইউনিয়ন এবং আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত হকার্স ইউনিয়ন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রায় ১০ হাজার হকার এবং স্টেশনের দোকানদারের জীবিকা পুরোপুরি ট্রেন চলাচলের উপর নির্ভরশীল।

বামপন্থী হকার্স ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক সত্যেন গুপ্ত এবং তৃণমূল পরিচালিত হকার্স ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওইসব পরিবারের কার্যত দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। অভিজ্ঞতা না থাকায় কেউ অন্য কাজে নিচ্ছে না।

Advertisement

ঘটিবাটি বিক্রি কিংবা ধারদেনা করে সংসার চলছে ওই হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। দূরপাল্লার হাতেগোনা যে ক’টি ট্রেন চালু হয়েছে, তাতেও উঠতে পারছেন না হকারেরা। উঠলেই মোটা টাকা ফাইন করে দেওয়া হচ্ছে।’’ বিষয়টি সহানুভুতির সঙ্গে বিবেচনা করার জন্য রেল দফতরের দৃষ্টি আর্কষণ করা হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

প্রায় ৯ বছর ধরে সাঁইথিয়া-গুসকরা লাইনে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন বোলপুর কালীপুকুরপাড়ের বাসিন্দা গৌতম দাস। লকডাউনের আগে দৈনিক আয় হত ৩০০-৪০০ টাকা। ছেলে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। মেয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী । হকারির আয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা-সহ কোন রকমে দিন চলে যেত। এখন চরম সঙ্কটে পড়েছেন। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘ফল-আনাজ বিক্রি করতে গিয়ে লোকসান খেয়ে পুরোপুরি বাড়িতে বসে রয়েছি। স্ত্রীর নামে ব্যাঙ্ক ১ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সেই টাকা ভেঙে ভেঙে খাচ্ছি। এখানেও লোকাল ট্রেন চালু হলে বাঁচি।’’

একই অবস্থা আমোদপুর সুকান্তপল্লির ছোলা বিক্রেতা বাবলু শেখ, চা বিক্রেতা মুন্না কোনাই, সাহানিপাড়ার চকলেট বিক্রেতা বিকাশ হাজরা, সাঁইথিয়া কসাইপট্টির জল বিক্রেতা সাবু শেখদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা পুরুষানুক্রমে ট্রেনে হকারি করে আসছি। অন্য কোন কাজের অভিজ্ঞতা নেই। তাই কেউ কাজে নিতে চায় না। রেশনের চাল , গমে একবেলা খেয়ে কোনও রকমে দিন কাটছে।’’

আমোদপুর স্টেশনে চা-বিস্কুটের দোকান রয়েছে ছোটলাইনপাড়ার নকুল মীরবহরের। বছর চারেক আগে স্ত্রীকে হারানোর পর থেকে দোকানটি শুধু জীবিকা অর্জনই নয়, সময় কাটানোর অন্যতম অবলম্বন তাঁর। সেই লকডাউন থেকে দোকানে তালা ঝুলছে। নকুল বলেন, ‘‘প্রতিদিন এসে ধূপ, সন্ধ্যা দিয়ে যাই। আর ঠাকুরকে বলি , ট্রেন চালু করে দাও।’’

শহরতলির লোকাল চালু হচ্ছে কাল, বুধবার থেকে। বীরভূমের উপর দিয়ে লোকাল ট্রেন চালু হলে ফের পুরনো পেশায় ফিপকতে পারবেন, অভাব কিছুটা হলেও ঘুচবে—এই আশায় বুক বেঁধেছেন নকুল, সাবু, মুন্নারা। আশঙ্কাও থাকছে। ট্রেন চালু হলে তাঁদের উঠতে দেওয়া হবে তো?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement