এই গাড়িতেই করে পাচার করা হচ্ছিল। নিজস্ব চিত্র
চালের পরে এবার রেশনের আটার প্যাকেট পাচার করতে গিয়ে এক ব্যক্তিকে ধরল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, লকডাউনের কারণে শুক্রবার দুপুরে রাজগ্রাম–ঝাড়খণ্ড সীমানায় নাকা তল্লাশি চলাকালীন একটি পিকআপ ভ্যানকে আটকানো হয়। ওই পিকআপ ভ্যানের উইণ্ডস্ক্রিনে ‘সবজি পরিবহণ’ নামে একটি স্টিকার সাঁটানো ছিল। কিন্তু ত্রিপল চাপা দেওয়া দেওয়া ডালার মধ্যে কোনও আনাজের ঝুড়ি না থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। ডাঁই করা বস্তার সবকটিতেই আটা ভর্তি করা ছিল। কিছু বস্তার মধ্যে ছিল রেশন থেকে দেওয়া আটার নির্দিষ্ট প্যাকেট।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এ রাজ্য থেকে চোরাই আটা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ঝাড়খণ্ডে। মুরারই থেকে রেশনের সরকারি আটার প্যাকেট ঝাড়খণ্ডে পাচার করার অভিযোগে ওই পিকআপ ভ্যানের চালক এবং খালাসি ছাড়াও নলহাটি পুর এলাকার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আটক করা হয়েছে রাজহংস চৌধুরী নামে মুদিখানার সামগ্রীর এক কারবারিকে। আটক হওয়া পিকআপ ভ্যানটি মুরারই থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বীরভূম জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এখন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া কোনও জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া কথা নয়। ঝাড়খণ্ড সীমানায় গাড়িটি যখন আটকানো হয় তখন চালক ও খালাসির কথায় অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছিল। তাতেই সন্দেহ হয়। গাড়ির পিছনে থাকা আনাজের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নানারকম কথা
বলতে থাকে।’’
তিনি জানান, এরপরেই পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে আনাজ নয় আটা আছে। কয়েকটি বস্তা খুলতেই রেশন থেকে যে আটার প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে সেগুলি বেরিয়ে পড়ে।
ক’দিন আগেই মুরারইয়ের রাজগ্রাম গোপালপুরের রেশন ডিলারকে রেশন বিলিতে অনিয়মের অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এক রেশন ডিলার রাতের অন্ধকারে চাল পাচার করতে গেলে গ্রামবাসীরা দেখে ফেলে। গ্রামবাসীরা ওই রেশন ডিলারের বাড়ি ঘেরাও করে। উত্তেজনা চরমে উঠলে মুরারই থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে রেশন ডিলারকে গ্রেফতার করে। রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে মামলা
রুজু হয়।
বুধবার পাইকর থানার ননগড় গ্রামে খাদ্যসামগ্রী কম দেওয়ার অভিযোগে একটি রেশন দোকানের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন উপভোক্তারা। একের পর এক কারচুপি, পাচারের অভিযোগ উঠছেই। অন্যদিকে, নলহাটি মুরারইয়ের বহু মানুষ এখন আধবেলা খেয়ে কোনও রকমে লকডাউন পার করার অপেক্ষা করছেন। আশা করে বসে আছেন লকডাউন উঠলেই আবার জোরকদমে কাজ শুরু হবে আর তখন উপার্জনও হবে। এদিকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধৈর্য ধরে ঘরে থাকা এবং বকেয়া চাল ও আটা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবারের ঘটনায় নিশীথভাস্কর পাল বলেন, ‘‘পুলিশের নাকা তল্লাশির সময় বেশ কিছু রেশনের আটার প্যাকেট আটক হয়েছে। খাদ্য সরবরাহ দফতরের আধিকারিককে দিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। অবৈধ কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ আর আটক হওয়া মুদি সামগ্রীর কারবারি বলেন, ‘‘আমি নলহাটির একটি আটার চাকি থেকে এই আটা কিনেছিলাম। আটাপ এই বস্তাগুলি ঝাড়খণ্ডের পাকুড় ও অন্য কয়েকটি এলাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রেশনের কিছু প্যাকেট ছিল একথা সত্যি। বাকি সবই চাকি থেকে কেনা আটার বস্তা।’’