বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের বাঁধগাবা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু ও প্রসূতি মিলিয়ে ৫৪ জনকে ধার করেই নিয়ম মতো ডিম খাওয়াচ্ছেন বলে জানান অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। নিজস্ব চিত্র
প্রায় তিন মাস হতে চলল বন্ধ রয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির ডিম ও আনাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ। বাধ্য হয়েই কোনও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ধার করে ওই সব সামগ্রী কিনছেন। কেউ বাড়ির ধান বিক্রি করে ডিম আনাজের বকেয়া টাকা মেটাচ্ছেন। রাঢ়বঙ্গের দুই জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি চালু রাখতে সমস্যায় পড়েছেন কর্মীরা। দ্রুত বরাদ্দ আদায়ে প্রশাসনের উফরে চাপ তৈরির জন্য কলকাতায় সংশ্লিষ্ট দফতরের সামনে বিক্ষোভ-কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সংগঠন।
বাঁকুড়ায় ৫,৭৩৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। ডিম-আনাজের বরাদ্দ না আসায় সমস্যায় পড়েছেন জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। বাম-প্রভাবিত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সংগঠনের রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি ইন্দ্রানী মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘জুন, জুলাই অগস্টের ডিম ও আনাজের বরাদ্দ আসেনি। শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দিতে ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন
জেলার কয়েক হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। বাজারে আর ধার দিতে
চাইছে না।’’
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সিংহ ভাগই অত্যন্ত গরিব পরিবারের। শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিতে ধার করেও কেন্দ্র চালু রেখেছেন তাঁরা, দাবি কর্মী সংগঠনের। বিষ্ণুপুরের এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বলেন, ‘‘পাড়ার লোকের কাছে ধার করেছি। তাঁরা এখন পাওনা চেয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। দ্রুত বরাদ্দ না এলে ভীষণ সমস্যা হবে।’’ সিমলাপালের এক কর্মীর কথায়, ‘‘এলাকার দোকানদারেরা কম পুঁজির ব্যবসা করেন। তাই বেশি ধার দিচ্ছিলেন না। বাধ্য হয়েই বাড়ির ধান বিক্রি করে ধার মিটিয়েছি।’’ একই অবস্থা পাত্রসায়রেও।
এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী জানান, বাজারে ধার করে রোজ উপভোক্তাদের পুষ্টিকর খাবার জোগাতে হয়। বরাদ্দ এসেছে কি না, তা ছোটছোট ছেলেমেয়ে বা প্রসুতিরা শুনতে রাজি নন। বড়জোড়ার এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর দাবি, মুদির দোকানে প্রায় ৫০ হাজার টাকা দেনা হয়ে গিয়েছে। আর ধার দিতে চাইছেন না মুদির দোকানের মালিক।
ইন্দ্রানীর অভিযোগ, ‘‘সব অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে স্মার্টফোন নিতে হয়েছে দফতরের নির্দেশে। তার টাকাও দেওয়া হয়নি।’’ সংগঠনের অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঁকুড়ার জেলা প্রজেক্ট আধিকারিক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বরাদ্দ পাঠানোর জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এলেই তা সব কেন্দ্রে পাঠানো হবে। ফোনের টাকাও কর্মীরা পাবেন। দ্রুত সমস্যা মিটবে।’’
অন্য দিকে, পুরুলিয়া জেলা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা জানান, দ্রুত বরাদ্দ না মিললে বড় আন্দোলনের পথে যাবেন তাঁরা। সম্প্রতি বাম-প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতির সদস্যেরা মানবাজার ১ ব্লকের উদ্যোগে কয়েকটি দাবির সমর্থনে শহরে মিছিল ও শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
সংগঠনের ব্লক সম্পাদক অনুরূপা সেনের অভিযোগ, ‘‘শিশুদের পুষ্টির কথা বলা হলেও কেন্দ্রগুলিতে তিন মাস ধরে ছাতু মিলছে না। ফলে সকালের জলখাবার বন্ধ। দু’মাসের বেশি হল ডিম ও আনাজের দাম বকেয়া রয়েছে। দোকানদারেরা আর ধারে জিনিস দিতে চাইছেন না। বকেয়া না মেটাতে পারায় আমাদের কথা শুনতে হচ্ছে। এটা কেন হবে?’’
সংগঠনের এক সদস্যের দাবি, দাম বাড়ায় আগের দরে ডিম ও আনাজ দিতে চাইছেন না দোকানদারেরা। জ্বালানি কাঠও আগের দামে মিলছে না। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অভিযোগ, মাসের ৫ তারিখের মধ্যে তাঁদের ভাতা সর্বত্র দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ওই কাজের জন্য নির্দিষ্ট পোশাকের কথা বলছে। সংগঠনের তরফে সেই শাড়ি সরবরাহের দাবি জানানো হয়েছে।
সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক আশালতা বিশ্বাস বলেন, ‘‘সম্প্রতি মানবাজার-সহ কয়েকটি ব্লকে কর্মীরা নানা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে কলকাতায় দফতরের অধিকর্তার কার্যালয়ের সামনে ২৯ অগস্ট অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসুচি নিয়েছি।’’
জেলা প্রকল্প আধিকারিক সৈয়দ আনজুম রুমান বলেন, ‘‘সম্প্রতি মানবাজার ১ ব্লকের কর্মীরা কিছু দাবির ভিত্তিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন বলে জেনেছি। দাবির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’