এই বাড়িতে সন্তান নিয়ে থাকেন শ্রীহরি লোহার। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী
কারও মাটির বাড়ি ধসে পড়ছে। দেওয়াল যাতে গলে না যায়, তাই প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছেন কেউ। বুধবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালগঞ্জ ষষ্ঠীবটতলায় গিয়ে দেখা গেল এমনটা। মঙ্গলবার ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির শিবির পরিদর্শন করে বেরনোর সময়ে মহকুমাশাসককে (বিষ্ণুপুর) ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যের শাসকদলের সভায় না যাওয়ায় সরকারি প্রকল্পের বাড়ি দেওয়া হয়নি। এসডিও তাঁদের সমস্যা নথিভুক্ত করে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেওয়ায়, আপাতত আশার আলো দেখছেন তাঁরা।
এ দিন ষষ্ঠীবটতলার লোহারপাড়ার বাসিন্দা শ্রীহরি লোহার জানান, ভাঙা ঘরেই কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি। শ্রীহরি বলেন, ‘‘আমি গাড়ি চালাই। এখন সেটাও বন্ধ। স্ত্রী লোকের ঘরে পরিচারিকার কাজ করে। আকাশে মেঘ এলেই ভয় করে। বৃষ্টিতে ছেলের বইপত্র, বিছানা— সব ভিজে যায়।’’ তাঁর দাবি, চার বছর আগে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য ছবি তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাড়ি আর পাননি। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘এখন আর কাউকে কিছুই বলি না। চোখের সামনে দেখছি, যাদের পাকা বাড়ি আছে তারাই সরকারি বাড়ি পাচ্ছে।”
একই অভিযোগ করেন করঙ্গাপাড়ার কল্পনা খাঁ, দেবদাস খাঁ, রমা পালের মত কয়েক জন। সজল কর্মকার নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘পরিবারের পাঁচ জনকে নিয়ে ভাঙা মাটির বাড়িতে থাকি। জলের ঝাপটায় দেওয়াল যাতে পড়ে না যায়, তাই বাজার থেকে প্লাস্টিক কিনে এনে ঢেকেছি। ১৫ বছর ধরে এ ভাবেই চলছে। কাঠের কাজ করে ছেলেকে কলেজে আর মেয়েকে স্কুলে পড়াচ্ছি। তিন-চার বার কাগজপত্র জমা দিয়েছি। টাকা দিয়ে অনেকেই বাড়ি পেয়েছে। আমাদের দেওয়ার ক্ষমতা নেই জেনেই হয়তো কেউ টাকার কথা বলে নি, আর বাড়িও হয়নি।”
তবে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর উদয় ভগত জানান, ‘সকলের জন্য বাড়ি’ প্রকল্পে ওয়ার্ডে মোট ৩৫০টি বাড়ি হওয়ার কথা। তাঁর দাবি, ১২০টি হয়ে গিয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে ৮০টি হচ্ছে। চতুর্থ পর্যায়ে বাকিগুলি হবে। উদয়বাবু বলেন, ‘‘এক বারে সব বাড়ি করার অনুমতি পেলে তো আমারই ভাল হত। ক্যামেরাম্যান নিয়ে গিয়ে আমি নিজে ফটো তুলতে গিয়েছিলাম ওয়ার্ডে। অনেকে রাজনীতি ভেবে আপত্তি করেছিল। এটা আমার বদনাম করার জন্য কেউ কেউ ওদের শিখিয়েছে।’’ আবাস যোজনার বাড়ির জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। উদয়বাবু বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাই বাড়ি পাবেন। পুরদফতরে গিয়ে মানুষজন দেখে আসতে পারেন, তাঁদের নাম তালিকাভুক্ত আছে কি না।”
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হরকালী প্রতিহার বলেন, “প্রশাসনের কাছে বিষ্ণুপুর পুরএলাকার মানুষ এ ভাবেই বিক্ষোভ দেখাবেন। ১৪ নম্বরের মতোই প্রতিটি ওয়ার্ডের বহু মানুষ সরকারি প্রকল্পের বাড়ি থেকে বঞ্চিত। এ সবের তদন্ত হওয়া দরকার। আগামী দিনে অভিযোগের পাহাড় জমে যাবে প্রশাসনিক দফতরগুলিতে।” সম্প্রতি বিষ্ণুপুরের পুরপ্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন তৃণমূলের দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। ষষ্ঠীবটতলার বাসিন্দাদের সরকারি প্রকল্পে বঞ্চনার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে না জেনে মন্তব্য করা ঠিক নয়। তবে পুর-এলাকায় অনেক বাড়ি তৈরি হচ্ছে এবং হবেও। তালিকাভুক্ত সবাই নিশ্চয় সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাবেন। তবে বিজেপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে ভুল বুঝিয়ে উত্তেজিত করছে।’’