আশায়: ভাল দাম নেই। তোলার পরে মাঠেই জমা করে রাখা হচ্ছে আলু। বিষ্ণুপুরের পেঁচাকুড়া গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
হিমঘর-মালিকদের মাধ্যমে ১ মার্চ, সোমবার থেকে ‘ন্যায্য’ মূল্যে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। যদিও মঙ্গলবার পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলায় হিমঘর মালিকদের মাধ্যমে জ্যোতি আলু কেনার কাজ শুরু হয়নি। কিন্তু যেখানে জমি থেকেই চাষিরা কেজি প্রতি সাড়ে ছ’টাকা দরে আলু বিক্রি করছেন, সেখানে খরচ করে হিমঘরে বয়ে নিয়ে গিয়ে ৬ টাকা কেজি দরে কেন আলু বিক্রি করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাঁকুড়া জেলার কৃষকদের একাংশ।
রাজ্যের অন্যতম আলু উৎপাদক এলাকা বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমা। এ বছর ভাল পরিবেশ থাকায় আলুর ফলনও বাড়বে বলে আশাবাদী কৃষক ও কৃষি দফতর। সে কারণে আলুর দাম না বাড়লে চাষিদের ক্ষতির আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
বিষ্ণুপুর মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তা সুব্রত কর্মকার বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর মহকুমায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে জ্যোতি আলু চাষ হয়। তার মধ্যে কোতুলপুর ব্লকেই প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। এ ছাড়া, সোনামুখী, বিষ্ণুপুর, পাত্রসায়রর ইত্যাদি ব্লকেও আলু তাষ হয়। এ বার চাষের খরচও যেমন বেড়েছে, ফলনেও বৃদ্ধির আশা রয়েছে।’’ এই পরিস্থিতিতে জেলার কৃষি আধিকারিকদের একাংশের মতে, আলুর ন্যূনতম দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা না হলে কৃষকদের পক্ষে
সুখকর হবে না।
বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগেই রাজ্য সরকার জানিয়েছে, চাষিদের পাশে দাঁড়াতে হিমঘর মালিকদের মাধ্যমে কেজিতে ৬ টাকা দরে আলু কেনা হবে। কিন্তু ওই দরে আলু বিক্রি করলে, চাষের খরচই পুরোপুরি উঠবে না বলে দাবি
করছেন চাষিরা।
কোতুলপুর ব্লকের বিবেকানন্দ দালাল, সদানন্দ ভদ্র, দীপঙ্কর পাল, বিষ্ণুপুরের পানরডাঙরের চাষি কাঞ্চন দে-র দাবি, অন্য বছরে যেখানে তাঁরা জ্যোতির বীজ আলু কিনতেন ৯০০-১২০০ টাকা প্রতি ৫০ কেজিতে। এ বার সেখানে ওই পরিমাণ বীজ আলু ৪,৫০০-৬,৫০০ টাকা দরে কিনেছেন। তার উপরে সেচের জল, কীটনাশক, সার, শ্রমিক ইত্যাদির খরচও তো রয়েছে। ১১০ দিন পরিশ্রম করে তাঁরা বিঘা প্রতি আলু চাষে খরচ দাবি করছেন ২৫-৩০ হাজার টাকা। তাঁদের মতে, অনুকূল পরিস্থিতিতে বিঘা প্রতি ৮০ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি আলু থাকে) আলু পাওয়ার আশা করছেন। সেক্ষেত্রে এক কেজি আলুর খরচই হচ্ছে ৬.২৫ টাকা থেকে ৭.৫০ টাকা। চাষিদের বক্তব্য, সরকারকে এর থেকে কম দামে আলু বিক্রি করলে লাভের বদলে লোকসানই হবে।
তাহলে এখান সাড়ে ছ’টাকা কেজি দরে মাঠ থেকে বিক্রি করছেন কেন?
চাষিদের দাবি, মাঠ থেকে ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রি করার ঝক্কি তুলনায় কম। ঝাড়াই বাছাই না করেই তাঁদের আলু বিক্রি করে হাতেনাতে টাকা মিলছে। কিন্তু সরকারকে আলু বিক্রি করতে গেলে বাছাই করা, নতুন বস্তা কেনা, গাড়িভাড়া করে হিমঘরে নিয়ে যাওয়া— এ সবের বাড়তি খরচ রয়েছে। তার উপরে কবে হিমঘর আলু কিনবে, তা-ও অনিশ্চিত। গরম বাড়ায় আলু পচে যাওয়ারও ভয় দেখা দিয়েছে।
বাঁকুড়া জেলা কৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, ‘‘আলু কেনার ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি এসেছে। কিন্তু যেহেতু নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে, তাই এখনই এ নিয়ে বিশদে বলা ঠিক নয়।’’
তবে বাঁকুড়া জেলা কৃষি বিপণন অধিকর্তা আকবর আলি বলেন, ‘‘ছোটও নয়, খুব বড়ও নয়, মাঝারি মাপের জ্যোতি আলু কৃষক প্রতি ৫০ বস্তা পর্যন্ত কেনার নির্দেশ এসেছে। তবে পরিবহণ খরচ কৃষকের।’’ কী ভাবে বিক্রি করা যাবে? আকবর জানান, ইচ্ছুক কৃষককে প্রথমে ব্লক অফিসে গিয়ে জমির পরচা, কৃষকবন্ধু প্রকল্পের নথির নকল জমা করতে হবে। তার ভিত্তিতে তিনি তালিকাভুক্ত হবেন। তারপরে ব্লক অফিস থেকেই তাঁকে জানানো হবে, কোন হিমঘরে,কবে তিনি আলু বিক্রি করতে পারবেন। তিনি জানান, এই বিষয়ে আজ, বুধবার জেলাস্তরের বৈঠক রয়েছে।