বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
এলাকায় ছ’দিন বিদ্যুৎ নেই। কাজে গাফিলতির অভিযোগ তুলে দিনভর বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের আটকে রাখলেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে ঘেরাও-মুক্ত হন তাঁরা। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের বনমালিপুরের ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ট্রান্সফর্মার-এ গোলযোগের জেরে গত ১৫ মে এলাকা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ে জানানো হলে, পরদিন ট্রান্সফর্মার বদলে দেওয়া হয়। গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, এর পরেই এলাকায় ভোল্টেজ-এর সমস্যা শুরু হয়। মাঝেমধ্যে ভোল্টেজ খুব বেশি বাড়ায় অনেকের টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান খারাপ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। তার পরে ফের ওই এলাকা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, গত ছ’দিন ধরে এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ দফতরে প্রতিদিন কেউ না কেউ গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু আধিকারিকদের কোনও হেলদোল ছিল না।
এ দিন বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ একটি গাড়িতে করে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা গ্রামে আসেন। ট্রান্সফর্মারটি পরীক্ষা করে জানান, সেটি বিকল হয়ে গিয়েছে। ফের নতুন ট্রান্সফর্মার বসাতে হবে। এর পরেই উত্তেজিত গ্রামবাসী তাঁদের ঘেরাও করেন। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ না আসা পর্যন্ত ওই কর্মীদের ঘেরাও করে রাখা হবে। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়েছে।
ঘটনার কথা জেনে গ্রামে যায় বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ। পুলিশের অনুরোধেও বিক্ষোভকারীরা বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের ঘেরাও-মুক্ত করেননি। উল্টে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়।
বেশ কিছুক্ষণ পরে পুলিশের সঙ্গে কথা হয় বিদ্যুৎ দফতরের স্থানীয় কার্যালয়ের আধিকারিকদের। গ্রামবাসীর দাবি, আজ, বুধবার নতুন ট্রান্সফর্মার বসিয়ে গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালুর আশ্বাস মিললে বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়।
শিবরাম দে নামে এক গ্রামবাসীর অভিযোগ, ‘‘ছ’দিন ধরে গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। আমি কিডনির সমস্যায় ভুগছি। ডায়ালিসিস চলে। গরমে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছি।’’ আর এক গ্রামবাসী সুবর্ণা মাইতি বলেন, ‘‘ঘরে অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে আছে। টানা কয়েকদিন বিদ্যুৎ না থাকায় কষ্ট পাচ্ছে।’’ অঞ্জলি মাইতি নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘আমার বাবা হাঁপানি রোগী। গরমে কষ্ট পাচ্ছেন।’’
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ের স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্ট জয়দীপ হালদার বলেন, ‘‘বুধবার ট্রান্সফর্মার বদলে দেওয়া হবে। এর আগেও ওই এলাকায় দু'বার ট্রান্সফর্মার খারাপ হয়েছিল। ওখানে কোনও একটি জায়গায় সমস্যা আছে। সেটা আমরা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এ দিন আমাদের কথা গ্রামবাসী শুনতে চাননি।’’
এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী বলেন, ‘‘গ্রামবাসীর দাবি মেনে আমরা বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। এ দিনের ঘটনায় বিদ্যুৎ দফতর লিখিত কোনও অভিযোগ করেনি। করলে পদক্ষেপ করা হবে।’’