সিপিএম পরিচালিত পরপর দু’টি পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনার পর বুধবার বিরোধী পরিচালিত মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধেও অনাস্থা আনল তৃণমূল।
এই পঞ্চায়েত সমিতির ২৮টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট ২০, তৃণমূল ৭ ও আদিবাসী গাঁওতা একটি আসন পায়। পঞ্চায়ের সমিতির সভাপতি হন ১৭ আসনে জেতা সিপিএমের মাধবী বাগদি। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সভাপতি দুর্নীতিগ্রস্ত। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার পরেও এলাকার কোনও উন্নতি হয়নি বলেও অভিযোগ শাসকদলের। সেই কারণেই অনাস্থা বলে নেতৃত্বের দাবি। সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য অনুন্নয়নের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
কিছু দিন আগেই মহম্মদবাজারের সেকেড্ডা ও অঙ্গারগড়িয়া পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনে শাসকদল। ওই দুটি পঞ্চায়েতে আজ, বৃহস্পতিবার ও পর দিন শুক্রবার ভোটাভুটি হওয়ার কথা। এরই মাঝে সিপিএম পরিচালিত মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনল শাসকদল। গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই পঞ্চায়েত সমিতির বিভিন্ন কাজ নিয়ে সিপিএমের মাধবী বাগদির সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরোধ সকলের জানা। শাসকদলের সঙ্গে যে কোনও ব্যাপারে সমানে টক্কর দিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। অনেকের মত, ক্ষোভের শুরু সেখানেই।
সিপিএম সূত্রের দাবি, এর আগেও নানা ভাবে পঞ্চায়েত সমিতি চেষ্টা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে শাসকদল। কিন্ত, কাজ হয়নি। তৃণমূলের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, এ বার কোমর বেঁধে নামা হয়েছে। বুধবার সদর মহকুমাশাসক অরুন্ধতী ভৌমিকের কাছে অনাস্থাপত্র দেয় শাসকদল। সই করেন শাসকদলের সাত, সিপিএমের ৬ ও দুই ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্য-সহ ১৫ জন।
সিপিএম নেত্রী মাধবীদেবীর অবশ্য দাবি, ‘‘১৫ জন সদস্য সই করেননি। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে তৃণমূল সংখ্যাটা বাড়িয়ে দেখাচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বর্তমান শাসকদল গণতান্ত্রিক কাঠামোটাকেই ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কোথাও বিরোধীদের মানতে পারছে না।’’ স্বজনপোষণ, দুর্নীতির অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। অনাস্থার মোকাবিলায় আইনি দিক খতিয়ে দেখছেন মহম্মদবাজার লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রভাষ বাগদি। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকার মানুষ বামেদের উপরে আস্থা রেখেছিলেন। যে কোনও মূল্যে তা রক্ষা করতেই হবে।’’
তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, অনাস্থা আনতে এক তৃতীয়াংশ সদস্যর সই লাগে। সেক্ষেত্রে এ দিন ১০ জন সদস্যের সই হলেই চলত। কিন্তু ১৫ জন সদস্য সই করেছেন। এই সংখ্যক সদস্য ভোটাভুটির দিন প্রয়োজন। ব্লক তৃণমূলের যুগ্ম সভাপতি তাপস সিংহ এবং গৌতম মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সদ্য হওয়া বিধানসভা ভোটেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে ব্লকের মানুষ আর সিপিএমের সঙ্গে নেই। রাজ্যে যখন উন্নয়নের বন্যা বইছে, তখন আমাদের ব্লক পিছিয়ে পড়ছে। এটা কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যায় না!’’ মহকুমাশাসক অরুন্ধতী ভৌমিক জানান, মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির ১৫ জন সদস্য এ দিন তাঁর সামনে অনাস্থা পত্রে সই করেছেন। তিনি বিডিওকে দায়িত্ব দিয়েছেন যাঁরা সই করেছেন, তাঁরা সকলে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কিনা খতিয়ে দেখতে। ২৪ তারিখ স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির বৈঠক কক্ষে সকল সদস্যদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।