বাপের বাড়ির কাছাকাছি আসতেই ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন তরুণী। নিজস্ব চিত্র।
বিয়ের দু’মাসের মাথায় ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন এক অষ্টাদশী। রবিবার পুরুলিয়া-কোটশিলা শাখার গৌরীনাথ ধাম এবং চাষরোড রেল স্টেশনের মাঝে আচমকা ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে দেন ঝুনপুকি গড়াই নামে ওই তরুণী। বাপের বাড়ির অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁদের মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, চলতি বছরের ২১ এপ্রিল গড় জয়পুরের ঝুনপুকির সঙ্গে বিয়ে হয় পাহাড়গোড়া রামপুরের বাসিন্দা ভোলানাথ গড়াইয়ের। ঝুনপুকির বাপের বাড়ির অভিযোগ, বিয়ের পর পরই মেয়েকে অত্যাচার করা হত। কয়েক দিন আগে দাদা রাহুলকে ফোনে মেসেজ করে ঝুনপুকি জানান, তাঁকে হেনস্থা করছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
এই মেসেজ পেয়ে তড়িঘড়ি বোনের শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন দাদা। বোনকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়েও আসছিলেন। ট্রেন যখন ঠিক জয়পুর স্টেশনে ঢুকছে, আচমকাই ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে দেন ঝুনপুকি। রেলের ওই শাখায় ডবল লাইনের কাজ চলছে। ফলে রেল লাইনে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। সেই বাঁশের বেড়ার উপর পড়েন ঝুনপুকি। ঘটনায় হতবাক হয়ে যান দাদা।
চাষ রোড স্টেশন নেমে দৌড়ে এসে বোনকে পুরুলিয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান দাদা। সেখান থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। দাদা রাহুলের কথায়, ‘‘আমার বোনকে অতিরিক্ত পণের দাবিতে মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হত। ওর স্বামী, শ্বশুর এবং শাশুড়ি মিলে অত্যাচার করত। এমনকি, আমার বোনকে ফোন পর্যন্ত করতে দিত না। ফোন করলে কল রেকর্ড করা হত। পরে নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।’’
রাহুল আরও জানান, বোন তাঁকে জানিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁদের ‘গরিব’, ‘ছোটলোক’ বলে গালমন্দ করতেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়ির মানসিক অত্যাচারে আমার ফুটফুটে বোনটি নিজেকে শেষ করে দিল। ওকে বাঁচতে দিল না ওরা।’’ জানান, বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকেদের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ করছেন তিনি।
এ নিয়ে জয়পুর থানার পুলিশ জানায়, ঘটনাটি নিতুড়িয়া থানায় অভিযোগটি সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, চেষ্টা করেও মৃতার স্বামী ভোলানাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।