আধার: ধরে রাখা হয়েছে ব্যবহৃত জল। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের বাগান ও ছাদ ভরে আনাজের গাছে। সে জন্য অনেক জলের প্রয়োজন। অন্য দিকে, মিড-ডে মিলের রান্নার বাসনপত্র ও পড়ুয়াদের হাত-পা ধুতেও কম জল নষ্ট হয় না। তার উপরে গরমে জলস্তর নেমে যাওয়ায় সাব-মার্সিবল পাম্পে বিশেষ জল ওঠে না। তাই নষ্ট হওয়া জল অপচয় না করে তা পুনর্ব্যবহারের যোগ্য করে তুলে অনেককে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পুরুলিয়ার বরাবাজারের লাকা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকেরা। জল সংরক্ষণের এই কৌশলের কথা বিশদে জানিয়ে পুরুলিয়া জেলা সমগ্র শিক্ষা মিশন সম্প্রতি রাজ্যস্তরে চিঠি পাঠিয়েছে।
সমগ্র শিক্ষা মিশনের জেলা শিক্ষা আধিকারিক বিকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘বরাবাজারের লাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জলের অপচয় রোধে যে ভাবে নিজস্ব উদ্ভাবনী কৌশল প্রয়োগ করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ওই স্কুলের জল পুনর্ব্যবহারের কথা জানিয়ে সমগ্র শিক্ষা মিশনের স্টেট প্রোজেক্ট ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়েছি।’’
পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের জন্য স্কুলের ছাদে আনাজের বাগান তৈরি করে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে লাকা প্রাইমারি স্কুল। এখানে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা একশোর বেশি। পড়ুয়াদের জন্য পাম্পে জল তোলা হয়। কিন্তু জল নষ্ট হতে দেখে মূলত প্রধান শিক্ষক শরৎ পরামাণিকের উদ্যোগে জল সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়।
স্কুল সূত্রে খবর, পড়ুয়াদের হাত-পা ও বাসন ধোয়ার জল একটি চৌবাচ্চার মধ্য দিয়ে প্রথমে বালির চেম্বারে যায়। সেখান থেকে কিছুটা শোধিত হয়ে কাঠকয়লার চেম্বারে ঢোকে। আরও শোধিত হয়ে একটি বড় চৌবাচ্চায় জমা হয়। সেই জল পাইপে করে আনাজের বাগান দেওয়া হচ্ছে। ওই চৌবাচ্চায় এখন মাছ, গুগলিও রয়েছে। ফুটেছে শালুক। চৌবাচ্চায় বেড়ে ওঠা মাছ পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের পাতেও পড়েছে।
লাকা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আগে দেখেছি, গ্রীষ্মকালে পাম্পের সাহায্যেও তেমন জল উঠছে না। তখনই জল পুনর্ব্যবহারের পরিকল্পনা মাথায় আসে। সিন্দরি পঞ্চায়েত ও বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্প করা সম্ভব হয়েছে।’’ সমগ্র শিক্ষা মিশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রুক্ষ-শুষ্ক পুরুলিয়া জেলা তো বটেই, রাজ্যের অন্যত্রও লাকা স্কুলের জল সংরক্ষণ মডেল হিসেবে নিতে পারে। তাতে জল-সঙ্কটের ধাক্কা কিছুটা হলেও কমবে।’’ একই মত বিডিও (বরবাজার) শৌভিক মজুমদারেরও। তিনি জানান, অন্য স্কুলেও এই ‘মডেল’ চালু হলে জলের অপচয় সত্যিই কমবে।