পুড়েছে জিনিসপত্র। নিজস্ব চিত্র।
কোনও আওয়াজ হচ্ছে শুনতে পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তখনই তীব্র ধোঁয়ায় শ্বাস আটকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয় তাঁদের। বুঝতে পারেন, বাড়িতে আগুন লেগেছে। একতলায় তাঁরা ছাড়াও একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন দুই আত্মীয়। দোতলায় ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতির দুই ছেলে, দুই পুত্রবধূ ও তাঁদের তিন শিশু সন্তান। চিৎকার শুনে ছুটে আসেন পড়শিরা। দোতলার জানলার গ্রিল ভেঙে সেটিকেই কার্যত সিঁড়ির মতো ব্যবহার করে জানলা দিয়ে ওই বাড়ির সদস্যদের পাশের বাড়ির ছাদে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন তাঁরা। রবিবার ভোরে বিষ্ণুপুরের শালবাগান এলাকায় পড়শিদের তৎপরতায় প্রাণে বেঁচেছেন এগারো জন বাসিন্দা।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী গুইরাম প্রতিহারের বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীদের অনেকের অভিযোগ, দমকল বিভাগে বারবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি। পুলিশে খবর দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে পৌঁছয়। ততক্ষণে বাড়ির সদস্যদের উদ্ধারে হাত লাগিয়েছেন পড়শিরা। দমকল কর্তৃপক্ষ যদিও দেরিতে পৌঁছনোর কথা মানতে চাননি। কী ভাবে বাড়িটিতে আগুন লাগল, তা তদন্তসাপেক্ষ বলে জানিয়েছে দমকল।
পড়শিরা জানান, ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ ওই বাড়ির ভিতর থেকে চিৎকার শুনে জড়ো হন তাঁরা। প্রতিবেশী সন্দীপকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে প্রথমে ভেবেছিলাম চোর ঢুকেছে। ছুটে এসে দেখি, উপরের তলায় ঘরবন্দি কয়েক জন। সঙ্গে-সঙ্গে আমাদের বাড়ির ছাদ দিয়ে নেমে জানলার গ্রিল ভেঙে কয়েক জনের সহায়তায় দু’টি ঘর থেকে সবাইকে বার করে আনা হয়।” পড়শি গণেশ ঘোষের দাবি, ‘‘এলাকার মানুষজনের তৎপরতায় রক্ষা মিলল। পাশের ছাদে উঠে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জ্বলন্ত বাড়ির গ্রিল ভাঙা সহজ কাজ ছিল না। দমকল বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে।’’ বাড়ির বধূ মুন্না প্রতিহার বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে দরজা খুলতেই ধোঁয়া দেখতে পাই। তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিই। বুঝতে পারিনি, কোথায় আগুন লেগেছে। ভেবেছিলাম, আর বোধহয় বেরোতে পারব না।’’
দমকলের আধিকারিক সনৎ কর্মকারের যদিও দাবি, ‘‘খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন আয়ত্তে আনা হয়েছে। আগুন লাগার কারণ এখনই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত হবে।” ওই বাড়ির সদস্যদের অনুমান, বাড়িতে সিঁড়ির পাশে দু’টি ব্যাটারি চালিত মোটরবাইক রাখা ছিল। একটিতে রাতের বেলা চার্জ দেওয়া হচ্ছিল। ব্যাটারি ফেটে সেখানেই প্রথম আগুন লাগে বলে তাঁদের প্রাথমিক অনুমান। পরিবারটির দাবি, দু’টি মোটরবাইক, কিছু আসবাবপত্র ও বিদ্যুতের তার পুড়ে গিয়েছে। দমকল সূত্রে জানা যায়, বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হওয়ার আগেই সেটিকে খোলা মাঠে ছুঁড়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।