(বাঁ দিকে) কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনে রাজ্যের ছয় আসনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। তৃণমূল জিতে নিয়েছে ছ’টি আসনই। এই ৬-০ ফলের উল্লেখ করেই অগ্নিমিত্রাকে ‘খোঁচা’ দিয়েছেন ফিরহাদ। তাঁর বক্তব্য, তৃণমূলে যোগ না-দিলে আগামী নির্বাচনে আসানসোল দক্ষিণে নিজের কেন্দ্রেও পরাজিত হবেন অগ্নিমিত্রা। ফিরহাদের এই বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন বিজেপি নেত্রীও।
বুধবার ছিল বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিন। ‘সংবিধান দিবস’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে সভাকক্ষে। সেই আলোচনা পর্বের শেষে অগ্নিমিত্রা ভাষণ দেন। একাধিক ক্ষেত্রে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর ভাষণ শেষ হলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ অনুমতি নিয়ে বলতে ওঠেন ফিরহাদ। সেই সময়েই তিনি অগ্নিমিত্রাকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। উপনির্বাচনের ফল নিয়ে বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে এত কুৎসা, এত অপপ্রচার করা হল। তার পরেও তো উপনির্বাচনে ৬-০ হল।’’ অগ্নিমিত্রার উদ্দেশে এর পর তিনি সরাসরি বলেন, ‘‘আপনাকে একটা কথা বলতে পারি, অনেকেই তো আপনাদের দল ছেড়ে আমাদের দিকে চলে এসেছেন। আপনিও চলে আসুন। তা যদি না করেন, আগামী দিনে আপনি কিন্তু নিজের বিধানসভা এলাকাতেও হেরে যাবেন।’’
ফিরহাদের কটাক্ষের পাল্টা দিয়েছেন অগ্নিমিত্রাও। তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা নির্দিষ্ট নীতি এবং আদর্শ রয়েছে। তার জন্যেই আমি বিজেপি করি। ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্যের মাধ্যমে আবার ওঁর পার্টির দখলদারির মানসিকতা প্রকাশ্যে এল। উনি আগে থেকেই জেনে গিয়েছেন, আমি ছাব্বিশের নির্বাচনে হারব! টিকিট যদি পছন্দ না-ও হয়, আমি অন্তত অন্য কারও বাড়িতে গিয়ে তাঁর চালে ঢিল ছুড়ব না। ফিরহাদবাবুকে বলব, আমার দিকে না তাকিয়ে মহিলাদের সম্মান কী ভাবে দিতে হয়, বিরোধী দলের মহিলাদের কী ভাবে সম্মান করতে হয়, সে দিকে নজর দিলে ভাল হবে।’’
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল দক্ষিণ থেকে জিতেছিলেন অগ্নিমিত্রা। তার পর ২০২২ সালে আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচনে বিজেপি তাঁকেই প্রার্থী করেছিল। কিন্তু সে বার তিনি জিততে পারেননি। পরে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও পরাজিত হয়েছেন অগ্নিমিত্রা। তাঁকে মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে টিকিট দিয়েছিল দল। সেই কেন্দ্রে যেমন তিনি জিততে পারেননি, তেমনই আসানসোলে জিততে পারেননি বিজেপি প্রার্থী এসএস অহলুওয়ালিয়া। লোকসভার পর বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবিকে হাতিয়ার করে বিধানসভায় তাদের কোণঠাসা করতে চাইল শাসকদল।
রাজ্যে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বুধবার বিধানসভায় মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল বিজেপি। দলের তরফে ওই প্রস্তাব আনেন হলদিয়ার বিধায়ক তাপস মণ্ডল। এ প্রসঙ্গে আলোচনার অনুমতি না পেয়ে বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করে বিজেপি। শাসক-বিরোধী স্লোগানও তোলেন বিধায়কেরা। তৃণমূলের তরফে বুধবার বিধানসভায় জানানো হয়েছে, বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব এনে আলোচনা হবে। আগামী শুক্রবার এই আলোচনার দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আগামী সোমবার এবং মঙ্গলবার বিধানসভায় ওয়াকফ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হবে। এ নিয়ে বিলও আনতে চলেছে তৃণমূল।