প্রতিমা সাজানো হচ্ছে। দেখুড়িয়া গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে কালীপুজোর ঐতিহ্য আছে। সেই কালীমন্দির চত্বরে জগদ্ধাত্রী পুজোর কবে থেকে প্রচলন হয়েছিল তা অবশ্য গ্রামবাসীর জানা নেই। তবে গ্রামবাসীর দাবি, রামপুরহাট থানার দেখুড়িয়া গ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজো প্রায় তিনশো বছরের পুরনো।
দশ বছর আগেও বাঁশ দিয়ে তৈরি টিনের অস্থায়ী ছাউনির নীচে জগদ্ধাত্রীর আরাধনা হত। পরে এলাকার বিধায়ক তথা ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দ থেকে পাকা দালান গড়ে ওঠে। সেখানেই এখন পুজো হয়। দেখুড়িয়া ছাড়াও উদয়পুর, কাঁদা, বলরামপুর, সাতঘড়িয়া, গোপালপুর, কৌড়–বালিয়া, কামিক্ষ্যা, রানাপুর, কুঁজোপাড়া, ন-খানা গ্রামের বাসিন্দারা যোগ দেন।
গ্রামবাসী জানান, ডাকের সাজে দেবী জগদ্ধাত্রীর সিংহবাহিনী মূর্তির পুজো হয়। এক দিনেই সপ্তমী, সন্ধি পুজো এবং নবমী তিথির পুজো হয়। বলিদানের প্রথা চালু আছে। নবমীতে সূর্য ওঠার আগে ভোরে গ্রামের মহিলা, পুরুষেরা ঢাক বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকা নদ থেকে ঘট ভরে আনেন। ঘট ভরার শোভাযাত্রায় গ্রামের আদিবাসী মহিলারা নৃত্য পরিবেশন করেন। শোভাযাত্রা শেষে গ্রামের কুমারী ও সধবা মহিলারা দেবীকে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি দিয়ে বরণ করার পরে পুজো শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত পুজো চলে। দশমীর সন্ধ্যায় দেবীকে গ্রাম প্রদক্ষিণ করে নদীতে যদি জল বেশি থাকে তা হলে সেখানে আর নদীতে জল না থাকলে গ্রামের বড়পুকুরে দেবীর বিসর্জন হয় ।
গ্রামবাসী জানান, নবমীর সন্ধ্যায় খিচুড়ির সঙ্গে জগদ্ধাত্রীকে নিবেদিত মানসিক বলিদানের পাঁঠার মাংস, বাঁধাকপির তরকারি, চাটনি সহযোগে পঙ্ক্তি ভোজনের আয়োজন করা হয়। সেখানে এক সঙ্গে পাঁচ হাজার জনের পাত পড়ে। গ্রামের বাসিন্দা অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়, কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমেশ্বর ভট্টাচার্যেরা বলেন, ‘‘বছর কুড়ি থেকে গ্রামের যুবকদের উৎসাহে জগদ্ধাত্রী পুজোর জৌলুস বেড়েছে। তারাপীঠের মা তারার সেবায়েতরাও এই পুজোয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।’’ পুজোর পাশাপাশি আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি, কালীপুজোয় বসা গ্রামীণ মেলা জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত থেকে যায়।