জামিরা টিলার এই গর্তেই চাপা দেওয়া ছিল মণিকা মাহাতোর দেহ। ইনসেটে মণিকা। —ফাইল চিত্র
পুরুলিয়ার ছাত্রী মণিকা মাহাতো হত্যা-কাণ্ডে রিপোর্ট তলব করল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারকে এক মাসের মধ্যে ওই ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। মণিকা হত্যার তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ তুলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছিল ‘আক্রান্ত আমরা’ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন। তার ভিত্তিতেই কমিশন ওই পদক্ষেপ করেছে বলা জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, আগামী ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে পুলিশ সুপারকে ওই ছাত্রীর খুনের বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। পুলিশ কর্তৃপক্ষকে কমিশনের বার্তা— নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা না পড়লে মানবাধিকার রক্ষা আইনের ১৩ নম্বর ধারা মোতাবেক পুলিশ সুপারকে কমিশনের কার্যালয়ে ‘ব্যক্তিগত হাজিরা’ দেওয়ার জন্য তলব করা হতে পারে। পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া অবশ্য সোমবার বলেন, ‘‘আমাদের কাছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কোনও চিঠি এসে পৌঁছয়নি।’’
গত ১০ মে পুরুলিয়ার বোরো থানার বড় মামরো এলাকার বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মণিকার দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে। ৩ মে টিউশন থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় ওই ছাত্রী। পরিবারের অভিযোগ, শারীরিক নির্যাতন চালানোর পরে খুন করা হয়েছে মণিকাকে। ঘটনায় জড়িত সবাইকে ধরা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছে পরিবার। সিবিআই তদন্তের দাবিতে পুরুলিয়া থেকে কলকাতা পদযাত্রা হয়েছে। একই দাবিতে মিছিলও করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
মণিকা হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দিয়েছে পুলিশ। তার পরে তিন সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। মণিকার বাবা সমীরকুমার মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘পুলিশের উপরে আমার কোনও আস্থা নেই। সিআইডি কী তদন্ত করছে তা বুঝতে পারছি না। আমার বয়ান রেকর্ড করেছে সিআইডি। তার পরে আর কিছু জানায়নি।’’ তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ওই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছে জেনে খুশি তিনি। তিনি বলেন, ‘‘শুনে ভাল লাগল যে কমিশন পুলিশের থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে।’’
গত মাসে মণিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন মানবাধিকার সংগঠন ‘আক্রান্ত আমরা’-র একটি প্রতিনিধি দল। ওই দলের সদস্য অম্বিকেশ মহাপাত্রের অভিযোগ, ‘‘এলাকার প্রভাবশালী কয়েক জনের নির্দেশে ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এমনকি, মণিকা নিখোঁজ থাকাকালীন পুলিশ তাঁর পরিবারের থেকে নিখোঁজ ডায়েরি নিতে অস্বীকার করে। ছাত্রীকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করেনি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘পুলিশ সক্রিয় হলে এই ঘটনা ঘটত না।’’
তথ্য অনুসন্ধান করে ফিরে আসার পরে মণিকা-হত্যা মামলায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠায় ওই সংগঠন। তার ভিত্তিতে কয়েক দিন আগে ওই ঘটনা নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের থেকে রিপোর্ট তলব করে কমিশন। কমিশনের কাছে যে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, তার প্রতিলিপিও জেলা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে।