—প্রতীকী চিত্র।
পানশালায় এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে তেতে উঠল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানার সুড়িসগড়া এলাকা। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে মদ্যপান করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান দিলীপ বাউরি (৪০) নামের রঘুনাথপুর থানার সালঞ্চি গ্রামের এক বাসিন্দা। শুক্রবার সকালে সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সুড়িসগড়া গ্রামের কাছে ওই পানশালার সামনে জড়ো হয়ে সালঞ্চির বাসিন্দারা দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান। চলে রাস্তা অবরোধও। তাঁরা ওই যুবকের মৃত্যু নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানান। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী ভাবে ওই যুবকের মৃত্যু হল, তা জানতে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রঘুনাথপুর থানার পুলিশ।” তবে তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, বাজি ধরে মদ খাওয়ার জেরে ওই কাণ্ড বলে তাঁরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন। তেমনই দাবি পানশালা কর্তৃপক্ষেরও।
তবে মৃতের ভাই পরিতোষ বাউরির পাল্টা দাবি, ‘‘দাদা বাজি ধরে মদ খেয়েছিল, এমন কথা রটানো হচ্ছে। আদৌও তা নয়। মদ বিষাক্ত ছিল কি না, তা দেখা দরকার।’’ তবে পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের পরিবার ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট আকারে অভিযোগ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রঘুনাথপুর থানায় দায়ের করেননি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এলাকার এক যুবকের সঙ্গে ওই পানশালায় গিয়েছিলেন দিলীপ। পানশালার এক কর্মী ঝাড়ু মণ্ডলের দাবি, ‘‘ওই দু’জনে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে মদ্যপান করেন। তারপর হঠাৎই দিলীপ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরাই রঘুনাথপুর থানায় খবর দিই। পুলিশের কথা মতো দিলীপকে গাড়িতে করে পাঠানো হয় রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।’’ তবে পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে রাস্তাতেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের।
রাতে হাসপাতালের এক কর্মীর মারফৎ মৃত্যু সংবাদ পান দিলীপের পরিবার। এ দিন সকালে সে খবর চাউর হতেই স্থানীয়েরা পানশালার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। ঝাড়ুখামার মোড় থেকে ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তাও দীর্ঘসময় ধরে অবরোধ করা হয়। সালঞ্চি গ্রামের বাসিন্দা তথা নতুনডি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রামজয় বাউরি, স্বপন দিগার, বেলারাম বাউরিরা দাবি করেন, ‘‘শুধু মদ্যপানের কারণেই দিলীপের মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা মানছি না। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হোক।” মদ বিষাক্ত ছিল কি না তা-ও খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন মৃতের পরিজনেরা। দিলীপের ভাই পরিতোষ, মা গায়িত্রী বাউরির দাবি, ‘‘মদ খেয়ে কেউ মরতে পারে? তবে কি মদ বিষাক্ত ছিল?” তবে বিষাক্ত মদের অভিযোগ মানতে চাননি পানশালার মালিক শুকদেব মণ্ডল। তিনি দাবি করেন, ‘‘পানশালার ‘লাইসেন্স’ আছে। বৈধ জায়গা থেকে মদ কিনে বিক্রি করা হয়।’’
তা হলে কী ভাবে মৃত্যু হল পেশায় ছোটখাটো ঠিকাদারি কাজে যুক্ত থাকা দিলীপের? পুলিশের দাবি, তদন্তে তারা প্রাথমিক ভাবে জেনেছে, আমতোড় গ্রামের বাসিন্দা এক বন্ধুর সঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পানশালায় গিয়েছিলেন দিলীপ। সেখানে দুই বন্ধুর মধ্যে মদ খাওয়া নিয়ে বাজি ধরা হয়। ঠিক হয়েছিল, দেড় ঘণ্টার মধ্যে ৭৫০ মিলিলিটার বিলিতি মদ পুরোটা দিলীপ শেষ করতে পারলে তার দাম ওই বন্ধু মিটিয়ে দেবেন। না হলে দাম দিতে হবে দিলীপকেই। এ দিন বাড়িতে গিয়ে দিলীপের ওই সঙ্গীকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। পানশালার কর্মী ঝাড়ুবাবুও দাবি করেন, ‘‘বাজি ধরার কথা শুনেই দিলীপকে মানা করেছিলাম। কিন্তু কথা শোনেননি।’’ পানশালার মালিক দাবি করেন, দেড় ঘণ্টার মধ্যে পুরো বোতল শেষ করার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন দিলীপ। কিন্তু এলাকারই বাসিন্দা দিলীপকে হাসপাতালে পাঠানো হলেও পরিবারকে কেন খবর দেওয়া হল না? উঠছে প্রশ্ন।