of JU Student’s

নিরপেক্ষ তদন্ত চাইছে ছত্রআড়া

এলাকার মেধাবী ছাত্রের রহস্য-মৃত্যুতে হতভম্ব বাঁকুড়ার জয়পুরের ছত্রআড়া। উচ্চশিক্ষার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া সৌমিত্র দে-র মৃত্যুর খবর বাড়িতে এসে পৌঁছয় রবিবার দুপুরে। তখন থেকেই দে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়।

Advertisement

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

জয়পুর শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩৯
Share:

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের মা ও দিদিমা।—নিজস্ব চিত্র।

এলাকার মেধাবী ছাত্রের রহস্য-মৃত্যুতে হতভম্ব বাঁকুড়ার জয়পুরের ছত্রআড়া।

Advertisement

উচ্চশিক্ষার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া সৌমিত্র দে-র মৃত্যুর খবর বাড়িতে এসে পৌঁছয় রবিবার দুপুরে। তখন থেকেই দে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। শীতের সন্ধ্যায় লো-ভোল্টেজের টিমটিমে আলোয় মাটির দুয়ারে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে আক্ষেপ করছিলেন মৃত ছাত্রের মা চন্দনা দে। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে শনিবার রাতেও ফোন করেছিল। বলেছিল পরীক্ষা দিয়েই বাড়ি ফিরবে। কোনও রকম অস্বাভাবিকতাও টের পাওয়া যায়নি। হস্টেলে কোনও সমস্যা ছিল বলেও ছেলে কোনও দিন জানায়নি। কিন্তু এ দিন কী যে হয়ে গেল!’’ কিছুটা দূরে সৌমিত্রের দিদিমা কাঞ্চন মণ্ডলও কাঁদছিলেন। তাঁদের স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন পড়শি ও পরিজনেরা।

উচ্চশিক্ষার জন্য নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া ছেলেকে নিয়ে সুদিনের স্বপ্ন দেখেছিল দে পরিবার। কিন্তু এ দিন দুপুরের একটা ফোনই সব তছনছ কর দেয়। খবরটা শুনেই কলকাতায় রওনা দেন সৌমিত্রের বাবা লক্ষ্মণ দে, দাদা শ্রীমন্ত দে। বাড়িতে রয়ে গিয়েছেন লক্ষ্মণবাবুর দাদা স্বপন দে। তিনি বলেন, ‘‘সপ্তাহ দুয়েক আগে সৌমিত্র বাড়ি ফিরেছিল। কলকাতায় যাওয়ার সময় প্রণাম করে বলে গিয়েছিল, পরীক্ষা শেষ হলেই বাড়ি ফিরে আসবে। কিন্তু এ কী খবর শুনলাম।’’

Advertisement

গ্রামের আটচালাতেও জটল চলছিল। বাসিন্দারা জানান, লক্ষ্মণবাবু পেশায় চাষি। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে সৌমিত্র বরাবরাই পড়াশোনায় ভাল। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে এলাকার স্কুল থেকে ভাল ফল করেছিলেন। তারপর বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির থেকে দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করতে যান। সেখানেও ভাল ফল করেন। এরপর তিনি স্নাতকোত্তর করতে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছিলেন। দ্বিতীয় বর্ষের তৃতীয় সেমেস্টার চলছে। তারই মধ্যে এ দিন সকালে বাড়িতে খবর এসে পৌঁছয় হস্টেলের ঘরে সৌমিত্রের গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত দেহ মিলেছে।

তাঁর একসময়কার সহপাঠী স্বর্ণেন্দু কুণ্ডু বলেন, ‘‘স্কুলে বরাবরই সৌমিত্র ফার্স্ট হয়ে এসেছে। খুবই মিশুকে ছিল। কলকাতায় আমার সঙ্গে সৌমিত্রের মাঝেমধ্যে দেখাও হতো। ক’দিন আগেও দেখা হয়েছিল। অনেক কথা হলো। কিন্তু কোনও সমস্যা চলছিল বলে শুনিনি। হঠাৎ ওঁর এই মৃত্যু কেন হল আমাদের বোধগম্য নয়। ওর মৃত্যুর রহস্য ভেদ করার জন্য পুলিশের কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি।’’ মৃত ছাত্রের পিসতুতো দাদা ঘনশ্যাম কুণ্ডুরও দাবি, ‘‘ভাইয়ের মৃত্যুর কারণ নিয়ে আমরাও অন্ধকারে। মামা (লক্ষ্মণবাবু) কলকাতায় পৌঁছনোর আগেই পুলিশ সাততাড়াতাড়ি কেন ময়নাতদন্ত করে দিল, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। মামাকে পুলিশের কাছে এ সব কারণ জানতে বলেছি।’’

আটচালার পাশে দাঁড়িয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে কার্তিক কুণ্ডু, কনক কুণ্ডু বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, সৌমিত্র বড় কোনও চাকরি পেয়ে গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু ওঁর এই মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।’’

যে ছেলে গ্রামে মাথা উঁচু করে ফিরবে বলে এতদিন আশা করেছিলেন গ্রামবাসী, এখন সেই ছেলের দেহ ফেরার অপেক্ষায় ছত্রআড়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement