Gajan

Festival: আনিসুরের বাড়িতে তৈরি সেরখানেক ঘি ছাড়া হোম হয় না বিউরের সিদ্ধেশ্বরের

ইতিহাস বলে, এক সময় এই বিউর গ্রাম ছিল বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের অধীনে। এক সময় বিউর গ্রাম ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইন্দাস শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২২ ১৭:২২
Share:

সিদ্ধেশ্বরের পুজোর আয়োজন চলছি বিউরে। —নিজস্ব চিত্র।

মুসলিম পরিবারে তৈরি হওয়া ঘি ছাড়া ‘অভুক্ত’ থাকেন সিদ্ধেশ্বর। সম্পন্ন হয় না হোম। একই সঙ্গে মুসলিম পরিবারগুলির পাঠানো ফল এবং মিষ্টি খেয়ে উপবাস ভাঙেন হিন্দু সন্ন্যাসীরাও। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সম্প্রীতির এমন অনন্য নজির বয়ে চলেছে বাঁকুড়ার ইন্দাস ব্লকের বিউর গ্রাম। প্রায় তিনশো বছর ধরে গ্রামবাসীরা পুজো করে আসছেন সিদ্ধেশ্বরের। এক বারও বেনিয়ম হয়নি সেই প্রথার।
বাঁকুড়ার বিউর গ্রামে গাজন শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন। শেষ হয় বুদ্ধপূর্ণিমায়। স্থানীয় সেন, সরকার এবং রায়— এই তিন পরিবার গাজন পরিচালনা করলেও, এই উৎসব আসলে বিউর-সহ আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামের। বিভিন্ন গ্রাম থেকে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ সন্ন্যাসী হন গাজনে। এই গাজনের অন্যতম আকর্ষণ বুদ্ধপূর্ণিমার হোম। সেই হোমের জন্য কমপক্ষে এক সের ঘি প্রয়োজন হয়। আর সেই ঘি আসে বিউর গ্রামেরই মল্লিকপাড়ার এক মুসলিম পরিবার থেকে। প্রথা, ওই মুসলিম পরিবার থেকে ঘি না এলে সিদ্ধেশ্বরের হোম হয় না।

Advertisement

সত্যনারায়ণ সরকার নামে গাজনের এক উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক কোনও দিনই এতটুকু টাল খায়নি। গাজন পরিচালনার ক্ষেত্রে যে কমিটি তৈরি হয় তাতে যেমন হিন্দুরা থাকেন তেমনই অনেক মুসলিমও আছেন। মুসলিম পরিবার থেকে আসা ঘিয়ে সিদ্ধেশ্বরের হোম হয়। তেমনই মুসলিম পরিবারগুলির পাঠানো ফল খেয়ে সন্ন্যাসীরা তাঁদের উপবাস ভঙ্গ করেন। যুগ যুগ ধরেই এই রীতি চলে আসছে।’’

আরও পড়ুন:
আরও পড়ুন:

সিদ্ধেশ্বরের মন্দিরে হোমের ঘি পাঠানোর রেওয়াজ প্রজন্মের পর প্রজন্মে ধরে চলে আসছে গ্রামেরই মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা আনিসুর রহমানের পরিবারে। আনিসুর বলছেন, “আমরা কে হিন্দু বা কে মুসলিম এ ভাবে ভাবি না। আমরা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মনে করি, এই উৎসব বিউর গ্রামের উৎসব। গাজন উৎসবের দু’মাস আগে থেকেই আমাদের বাড়িতে হোমের জন্য ঘি তৈরি করা শুরু হয়। বুদ্ধপূর্ণিমার ঠিক আগের দিন তা নিজের হাতে আমি পৌঁছে দিয়ে আসি সিদ্ধেশ্বরের মন্দিরে। সেই ঘি দিয়েই হয় সিদ্ধেশ্বরের হোম।’’

Advertisement

ইতিহাস বলে, এক সময় এই বিউর গ্রাম ছিল বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের অধীনে। এক সময় বিউর গ্রাম ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। জনশ্রুতি, স্থানীয় গোয়ালা সম্প্রদায়ের এক পরিবারের পালিত গরু প্রতি দিন ছাড়া পেলেই এই জঙ্গলে চলে আসত। এক দিন কৌতূহলবশত গাভীর পিছন পিছন গোয়ালা এসে দেখতে পান, জঙ্গলের ভিতরে একটি কালো পাথরের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে গাভীটি। আর কালো পাথরের উপর দুধ পড়ছে। বিষয়টি জানতে পারেন বিষ্ণুপুরের তৎকালীন মল্লরাজা চৈতন্য সিংহ। তিনি সরেজমিনে বিষয়টি দেখে ওই জঙ্গলের মধ্যে সিদ্ধেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে গাজন উৎসবের সূচনা করেন। এলাকার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে মল্লরাজা চৈতন্য সিংহই একটি মুসলিম পরিবারকে জমি এবং পুকুর দান করেন। বিনিময়ে সেই পরিবারের পাঠানো ঘি দ্বারা সিদ্ধেশ্বরের হোম করার নির্দেশ দেন। কথিত, সেই রেওয়াজই চলে আসছে এখনও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement