—ফাইল চিত্র
প্রত্যেক বাড়িতে পোঁছে যাচ্ছে অটো-ভোটার স্লিপ। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রেই নাম-পদবিতে ভুল থাকায় সমস্যায় পড়েছেন মুরারই ২ ব্লকের মিত্রপুর, কুশমোড় (১ ও ২) পঞ্চয়েত এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, এক দিকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) আতঙ্কে দিশাহারা। তার উপরে ভোটার লিস্টে নাম ভুল থাকায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
বাসিন্দারা বলছেন, ব্লক অফিস থেকে যে ভোটার স্লিপ দেওয়া হয়েছে, তাতে কারও কারও পদবি দু’বার লেখা আছে। আবার নামের অক্ষরে ভুল, বানানে ভুল, ভোটারের নাম ও তাঁর বাবার নাম এক হয়ে যাওয়া, স্বামীর নাম ভুল চলে আসা কিংবা নাম ঠিক থাকলেও ছবি অন্য জনের—এমন অসংখ্য ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে ভোটার স্লিপে। তাঁদের অভিযোগ, ভুল শোধরাতে মানুষ যাচ্ছেন নিজের বুথে বিএলও-র (বুথ লেভেল অফিসার) কাছে। কিন্তু কিছু অফিসার বলছেন, ‘ত্রুটি সংশোধন অনলাইনে করে নিন’। এর ফলে অনেক গরিব মানুষকে আবার টাকা দিয়ে সাইবার ক্যাফে বা তথ্যমিত্র কেন্দ্রে গিয়ে সংশোধন করাতে হচ্ছে।
কুশমোড় এলাকায় তেমনই এক কেন্দ্রের সামনে ইদানিং দেখা যাচ্ছে ভিড়। সেখানে হাজির মিত্রপুর গ্রামের আনারুল শেখ বলেন, ‘‘আমি গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বাসন বিক্রি করি। বাড়িতে আট জন সদস্য। আমার ভোটার লিস্টে নাম ভুল এসেছে। তিন দিন ধরে পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও অফিসে ঘুরছি নাম
সংশোধনের জন্য। শেষে এখানে এসেছি অনলাইনে ভুল সংশোধন করাতে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমার মতো অনেকেই বিভ্রান্তের মতো ঘুরছে। প্রশাসনের উচিত, প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে ভোটার লিস্টের কাজ করানো। না হলে আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’’
গোয়ালকুন্ডা ও বাগিশপুর গ্রামের ৪০ নম্বর বুথে ১৩৩৪ জন ভোটার। এর মধ্যে ১০৮ জনের দু’বার পদবি এসেছে। যেমন, ভোটার কার্ডে নাম আছে সেলিম শেখ, কিন্তু ভোটার স্লিপে দেখা যাচ্ছে সেলিম শেখ শেখ। এ রকমই আরও নানা ত্রুটির শিকার তিনশো জনেরও বেশি। বিডিও (মুরারই ২) অমিতাভ বিশ্বাসের সঙ্গে এ দিন অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। ব্লক অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, অনলাইনে কাজ করার ফলে অধিকাংশ ভুল হয়েছে। বাংলা সফটওয়্যার নিয়েও সমস্যা হচ্ছে। যাঁরা ওই কাজ করছেন, তাঁরা অনেকেই দক্ষ নন। ফলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নামের জায়গায় পদবি, আবার পরে পদবি লেখা হয়েছে। ভোটার স্লিপ হাতে পাওয়ার পরে তাতে ভুল দেখে অধিকাংশ ভোটার পঞ্চায়েত এবং ব্লক অফিসে ছুটছেন আট নম্বর ফর্ম পূরণ করে সমস্ত তথ্য জমা দিতে।
মিত্রপুর পঞ্চয়েতের প্রধান মরজিনা বেগম বলেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েত এলাকার ভোটার লিস্টে অন্তত ৪০ শতাংশ নাম ভুল এসেছে। পঞ্চায়েতের কর্মীরা সব কাজ বন্ধ করে সংশোধন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। সাধারণ মানুষও সকাল থেকে সব কাজ ফেলে এখানে হত্যে দিচ্ছেন।’’ তাঁর দাবি, নয়া
নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি-র আতঙ্ক এখনও মানুষের মনে গেঁথে আছে। ফলে ভোটার লিস্টে ভুল থাকায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক বেশি করে ছড়াচ্ছে। কুশমোড় ২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান, এলাকার তৃণমূল নেতা ওসমান গনির কথায়, ‘‘আমাদের এলাকাতেও অনেকের ভোটার লিস্টে ভুল না-পদবি এসেছে। তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পঞ্চায়েতে আসছেন। আমরা তাঁদের নাম সংশোধনের ফর্ম লিখে দিচ্ছি। কারণ, অনেকেই লেখাপড়া জানেন না।’’