জনতার দরবারে পুরপ্রধান। সিউড়ি পুরসভায় ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
• সিউড়ি শহরে কোনও নির্দিষ্ট মাছ বাজার নেই। মূল মাছ-বাজারটাই বসে সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তার উপরে। এই ছবি কি বদলাবে?
নবনীতা রায়, ৬ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি মাছ বাজারটিকে স্বদেশি মার্কেটের বেসমেন্টে নিয়ে যেতে। সবে দায়িত্ব নিয়েছি। আশা করি, সমস্যা মেটাতে পারব।
• রাস্তা, নিকাশি নালা সংস্কার ও অবৈধ দখলদারি উচ্ছেদের ক্ষেত্রে পুরসভার ভূমিকা ইতিবাচক। তবে শহরের আবর্জনা ফেলার ঠিকঠাক জায়গা নেই। শহরে ঢোকার মুখে দুটি জায়গায় আবর্জনা ফেলে ডাঁই করে রাখা হয়েছে। সেটা যেমন দৃষ্টিকটু, তেমনই দূষণ ছড়ায়।
সমর্পণ ভট্টাচার্য, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: সত্যিই আমাদের আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না। মাস দুই আগে জেলা শাসককে জানানোর পরে সিউড়ির খটঙ্গায় একটি জায়গা আমরা পেয়েছি। আপাতত সেখানেই আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। দূষণ যাতে না ছড়ায়, সে জন্য আগের জায়গা থেকে আবর্জনা তুলে বর্তমানের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলার জন্য ইতিমধ্যেই দরপত্র ডাকা হয়েছে।
• শহরের বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুল, যেখানে নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে অথচ সেই নিকাশি নালাগুলি দীর্ঘদিন সাফ করা হয় না। দুর্গন্ধ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্লাস করানো দায়। যদি পুরসভা সে দিকে নজর দেয়! অন্য দিকে সংস্কারের নামে বেশ কয়ে কবছর ধরে বন্ধ সিউড়ির প্রধান সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র রবীন্দ্র সদন। পুরসভা কী ব্যবস্থা ভাবছে?
রতন দে সরকার, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: ডেঙ্গির জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্লিচিং, চুন ছড়াতে বলা হয়েছে। আর পুরসভার পক্ষ থেকে ৫০০ আসন বিশিষ্ট একটি প্রেক্ষাগৃহ করার জন্য ডিপিআর (ডিটেল়়্ড প্রজেক্ট রিপোর্ট) দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের যেহেতু জায়গা কম, তাই এই প্রস্তাব মানা হয়নি। রবীন্দ্রসদনটি হস্তান্তর করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সে দিন বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে থেকেই সে কথা বলেছেন। নতুন সাজে রবীন্দ্র সদনকে সাজিয়ে তুলতে বরাদ্দ হয়েছে ৮ কোটি টাকা। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
•যানজট সিউড়ি শহরের একটা বড় সমস্যা। বিশেষত অফিস টাইমে অসুবিধা হয় শহরের বিভিন্ন মোড়ে। দ্বিতীয় প্রশ্ন, শহরের বহুতল বাড়িগুলি নিয়ে। শহরের অনেক এমন বহুতল রয়েছে, যেগুলি নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি। পুরসভা যখন বহুতলগুলিকে অনুমোদন দেয় তখন কি সেটা দেখে না?
সৈয়দ মহম্মদ রেহান বাশার, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: যানজটের মূল কারণ হচ্ছে টোটোর আধিক্য। জেলা পরিবহণ আধিকারিক চিঠি দিয়ে শহরে টোটোর সংখ্যা জানতে চেয়েছিলেন। গ্রাম ও শহর মিলিয়ে ৭৪৩টি টোটো রয়েছে। এবং টোটো আর বাড়তে না দেওয়া ও রুট করে দেওয়ার কথা ভাবছে দফতর।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলি, ভবিষ্যতে বহুতলের অনুমোদন দেওয়ার আগে নিয়ম মেনেই অনুমোদন দেবে পুরসভা।
• শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বিখ্যাত সব ব্যক্তিত্বের অন্তত ১০টি মূর্তি রয়েছে। প্রথমত, সেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি মূর্তি আদৌ সেই ব্যক্তিত্বের অবয়বের সঙ্গে মেলে না। দ্বিতীয়ত, অত্যন্ত অযত্নে রয়েছে মূর্তিগুলি। কী ভাবছে পুরসভা? এ ছাড়া, শহরের সৌন্দর্যায়ন নিয়েই বা কী ভাবছে?
সারথি দাস, ৭ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: আপনি ঠিকই বলছেন, মূর্তিগুলির বেশ কিছু আসল ব্যক্তির অবয়বের সঙ্গে মেলে না। কিন্তু বিগত বোর্ডে যখন যাঁরা এগুলি আনিয়েছেন, তাঁরা হয়তো ততটা বোঝেননি। সেই মূর্তিগুলির পরিবর্তন করা যায় কি না তা নিয়ে মিটিংয়ে আলোচনা করব।
• প্রায়ই দেখি, রাস্তার মোড়ে দিবারাত্রি জ্বলে রয়েছে পথবাতি। পুরসভার পানীয় জলের যে কলগুলো, তাতে স্টপকক না থাকায় দিনরাত জল পড়ে যাচ্ছে। এই অপচয় বন্ধের দিকে নজর দিক পুরসভা। সঙ্গে বলি, শৌচাগার না থাকায় নিকাশি নালাকেই অনেকে শৌচাগার হিসাবে ব্যবহার করেন। এই ছবি বদলানোর কী উপায়?
উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়
রঞ্জনা অধিকারী, ৯ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: হ্যাঁ, পুরবাসী অনেক পরিবারে শৌচাগার নেই। নির্মল বাংলা প্রকল্পে শহরেও শৌচাগার গড়ার লক্ষ্যে পুর-এলাকার অন্তর্গত যে পরিবারগুলির শৌচাগার নেই তার সমীক্ষা করে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললে ছবি বদলাবে। আর পথবাতি ও জলের অপচয় বন্ধে যা বলছেন, সে কথা মাথায় রাখব।
• পুর-পরিষেবার বাইরেও পুরসভার একটা ভূমিকা রয়েছে। যেমন— গাছ লাগানো, শিক্ষক দিবস উদ্যাপন, সম্প্রীতির জন্য ইদ বা দুর্গাপুজোর মত উৎসবগুলিকে বেছে নেওয়া, বা বই মেলার আয়োজন —সেগুলো এখানে হয় না!
ফতেমা আখতার, ৫ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: শিক্ষকদিবস উদ্যাপন বইমেলা আয়োজনের মতো বিষয় নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করব।
• সিউড়ির সমন্বয়পল্লির রাস্তা ঘাটের এত খারাপ অবস্থা যে গ্রামের রাস্তাকেও হার মানায়। পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থাও তথৈবচ। এ ছাড়া, শহরের এমন অনেক রাস্তা রয়েছে যেগুলোতে জল জমে। গাড়ি, রিকশাও ঢুকতে পারে না। পুরসভা যদি ব্যবস্থা নেয়, উপকৃত হই।
বাণী দে, ২ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: ঠিকই, সমন্বয়পল্লি শহরের একটি নিচু ওয়ার্ড। সবচেয়ে বড় ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। সমস্যার কথা আমি জানি। ওটা আমার নজরেও রয়েছে। ওখানে আগে যাঁরা কাউন্সিলর ছিলেন, জানি না তাঁরা কী ভাবে বরাদ্দ টাকা খরচ করেছেন! তবে আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি, অবস্থা শুধরে দেব।
• আমার ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে একটাই সমস্যা। একটি রাস্তায় জল জমে থাকা। বহু বার বলেও কাজ হয়নি। পুরসভা যদি সেটা দেখে। তা ছাড়া, শহরের অনেক প্রবীণ নাগরিক রয়েছেন। প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণে একটি আইন পাশ হয়েছে। তা অনুযায়ী চিকিৎসা সহ নানা সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয়েছে। পুরসভা যদি এই নিয়ে একটি সচেতনতা শিবির আয়োজন করে, তা হলে অনেকে উপকৃত হন।
যুগলকিশোর দে, ৯ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: আপনার ওয়ার্ডের রাস্তাটির সমস্যা দীর্ঘদিনের। অবশ্যই সেটা তৈরি করতে হবে। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠিয়ে রাস্তাটির হালহকিকত দেখে আসা হয়েছে। আশা করি, পুজোর আগেই সে কাজ করতে পারব। আর প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরের যে প্রস্তাব, সেটাও মাথায় রাখছি।
• সিউড়ি জেলা হাসপাতাল যেটা পুরসভার মধ্যে রয়েছে, সেখানে রোগীদের রক্তের জোগান পেতে প্রায়শই সমস্যায় পড়তে হয়।
অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, ৯ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: শহরের বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলছি। যাতে রক্তদান শিবির এক সঙ্গে একাধিক না করে সেটা বছরের বিভিন্ন সময় ভাগ করে নেওয়া যায়।
• নেশার কবলে পড়ে শেষ হচ্ছে সিউড়ির যুব সমাজ। পুরসভার তরফে কিছু করা যায় না?
রহমাত খান, ৫ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: আমরাও চিন্তিত। প্রতি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের দিয়ে প্রচার চলছে। মানুষ এগিয়ে আসছেন। পুলিশকেও বলছি।
•সিউড়ি জেলা সদর। বক্রেশ্বর, রাজনগর, তারাপীঠ, বোলপুর, দুবরাজপুর, পাথরচাপুড়ি যাতায়াতের যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা যায়, তা হলে এখানে পর্যটনের বিকাশ সম্ভব।
সুবিমল দাস, ১ নম্বর ওয়ার্ড
পুরপ্রধান: উত্তম প্রস্তাব। বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে পুরসভা।