নৌকা উদ্বোধনের পরে সমুদ্রবাঁধে মন্ত্রী ও আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র
বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের ইতিহাস বিষ্ণুপুর ছাড়িয়ে রয়েছে বাঁকুড়ার জয়পুরেও। এখানে প্রাচীন স্থাপত্যের টানেও পর্যটকেরা আসেন। এ বার পর্যটকদের বিনোদনের জন্য পরিকাঠামো গড়ে, ধীরে ধীরে সাজানো হচ্ছে জয়পুরকেও।
গত কয়েকবছরে জয়পুর পর্যটন মেলা, ট্রি কটেজ, বনমঞ্জরী পার্ক, ডিয়ার পার্ক, ওয়াচ টাওয়ার, ভেষজ উদ্যান ইত্যাদি চালু হয়েছে। এ বার জয়পুরের সমুদ্রবাঁধ বা ঢোল সমুদ্রকেও পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে।
সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছিল সমুদ্রবাঁধ। ২০১৬ সালে সরকারি উদ্যোগে বাঁধ সংস্কার করা হয়। তারপরেই শুরু হয় মৎস্য চাষ। এ বার পর্যটকদের জন্য সেই বাঁধে শনিবার যন্ত্রচালিত নৌকা চালু করা হল। উদ্বোধন করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা কোতুলপুরের বিধায়ক শ্যামল সাঁতরা। এ দিন একটি নৌকা চালু করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, শীঘ্রই আরও একটি নামানো হবে। ছিলেন বিডিও (জয়পুর) বিডিও বিট্টু ভৌমিক, জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি টগরি মাঝি, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ও পুলিশ আধিকারিকেরা।
শ্যামলবাবু বলেন, “বছর চারেক আগে কৃষি-সেচ দফতরের আর্থিক সহায়তায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্রবাঁধের সংস্কার করা হয়। মোট ৭০ একরের মধ্যে ৫২ একর জমিতে রয়েছে এই বাঁধ। বাঁধের মাঝে নির্মাণ করা হয়েছে কৃত্রিম ভাবে দ্বীপ। সেটি পরিযায়ী পাখিদের আস্তানা হয়ে উঠেছে। বাঁধের চার পাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বনমঞ্জরী’।’’ তিনি জানান, আগে কয়েকটি প্যাডেল বোট নামানো হয়েছিল। এ বার বিধায়ক উন্নয়নের তহবিলে দু’লক্ষ টাকা ব্যয়ে দু’টি যন্ত্রচালিত নৌকা নামানো হচ্ছে। শীঘ্রই টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হবে।
বিডিও জানান, প্রতিদিন বেলা ১০ থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সমুদ্রবাঁধে পর্যটকেরা নৌকাবিহার করতে পারবেন। সমুদ্রবাঁধে নৌকা বিহারের খবরে খুশি পর্যটকেরা। নৌকা চালানোর দায়িত্বে থাকা কর্মী নাসিম মল্লিক বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে, লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে তবেই যাত্রীদের নৌকায় তোলা হবে।’’
উদ্বোধনের পরেই শ্যামলবাবু প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে নৌকায় চেপে দ্বীপটি পরিদর্শন করেন। দ্বীপে সৌরবাতি রয়েছে। এ বার তা বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান।
কলকাতা থেকে সপরিবারের এসেছেন সোমপর্ণা গুহ। এ দিন সমুদ্রবাঁধে এসে তিনি বলেন, “জয়পুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মন ভরে গেল। পরিবেশ বান্ধব ‘ট্রি কটেজ’, ‘ব্যাম্বু কটেজ’ খুব ভাল লাগছে। বাঁধের হাওয়া ও নৌকোয় ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা।’’ বাঁকুড়া শহর থেকে এসেছিলেন মিতালি সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘জয়পুর যে এত বদলে গিয়েছে, জানতাম না। এ বার আত্মীয়দের নিয়ে আসব।”