dubrajpur

মুখ্যমন্ত্রীর সংবর্ধনা পেয়ে প্রমীলার মুখে মায়ের নাম 

ঘটনাকে ঘিরে দুবরাজপুরের পদুমা পঞ্চায়েতের কলুশীর্ষা গ্রামের দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী আদিবাসী পরিবারে খুশির বন্যা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ০৬:৩১
Share:

মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া শংসাপত্র হাতে প্রমীলা ও মা জবারানি। শুক্রবার নিজেদের গ্রামের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছিলেন মা। মেয়ে যাতে মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়, মায়ের আবদার ছিল সেটাই। মায়ের সে ইচ্ছেপুরণ সে করেছো তো বটেই। এ বছর মাধ্যমিকে কৃতীদের মধ্যে স্থান করে নেওয়ায় বৃহস্পতিবার কলকাতায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকেও সংবর্ধনা পেয়েছে দুবরাজপুর খণ্ডগ্রাম হাই মাদ্রাসার আদিবাসী ছাত্রী প্রমীলা টুডু।

Advertisement

ঘটনাকে ঘিরে দুবরাজপুরের পদুমা পঞ্চায়েতের কলুশীর্ষা গ্রামের দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী আদিবাসী পরিবারে খুশির বন্যা। গভীর রাতে কলকাতা থেকে টিনের চাল ও মাটির বাড়িতে ফিরে এসে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ঘোর কাটেনি মা জবারানি ও মেয়ে প্রমীলার। দু’জনেই বলছেন, এমনটা যে হতে পারে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি। হাই মাদ্রাসা বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষায় আদিবাসী পড়ুয়া হিসাবে রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে নাম প্রমীলা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৪.৪ শতাংশ। খণ্ডগ্রাম ডিএস হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক করিবুল হোসেনের কথায়, ‘‘যে প্রতিকূলতা ঠেলে প্রত্যন্ত গ্রামের ওই ছাত্রী কৃতীদের তালিকায় আসতে পেরেছে, সেটাকে কুর্নিশ করতেই হয়। আমরা গর্বিত।’’ একই প্রতিক্রিয়া আদিবাসী গ্রামটির বাসিন্দাদের।

প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতীদের সংবর্ধনা দেয় রাজ্য সরকার। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে মাদ্রাসা, আইসিএসই, সিবিএসই, জয়েন্ট এন্ট্রান্সে কৃতীরাও। বৃহস্পতিবার কলকাতার বিশ্ববাংলা মেলা প্রাঙ্গণে এ বারের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতীদের সংবর্ধিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরভূম জেলা থেকে প্রমীলা-সহ ৮ জন কৃতীকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল জেলা প্রশাসন।

Advertisement

কলুশীর্ষা গ্রামটি শাল নদীর কুলতোড় ব্যারাজ ঘেঁষা। গ্রাম থেকে মাদ্রাসার দূরত্ব কমবেশি চার কিলোমিটার। রাস্তার অবস্থা করুণ। বর্ষাকালে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করাই দায়। প্রতিদিন স্কুল আসা-যাওয়া ও টিউশন নেওয়ার জন্য কমপক্ষে দু’বার করে চারবার যাতায়াত করে পড়াশোনা করাটাই কঠিন ছিল প্রমীলার পক্ষে। কিন্তু, পাশে থেকে মেয়েকে ক্রমাগত সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন পেশায় আশাকর্মী জবারানি। বাবা বাজুন টুডু দিনমজুর। দুই সন্তানের বড় প্রমীলা। মেয়ে লেখাপড়া শিখুক, সবচেয়ে বেশি চাওয়া ছিল মায়ের।

জবারানি বলেন, ‘‘গ্রামে লেখাপড়ার চল কম। নিজে মাধ্যমিক পাশ করেছি বলে জানি লেখাপড়া ছাড়া জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। খুব কষ্ট করেছে মেয়েও। টিউশন, স্কুল মিলিয়ে সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাইরেই থাকত।’’ তিনি জানান, মাধ্যমিকের সময় টানা কয়েক সপ্তাহ গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। জবা জানান, মেয়ের সৌজন্যে তিনিও প্রথমবার কলকাতা গেলেন।

প্রমীলাও বলছে, ‘‘ভাল ফলের পিছনে মায়ের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তবে, কোনও দিন ভাবিনি কাছ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখব। তাঁর থেকে পুরস্কার নেব। শংসাপত্র, ঘড়ি, অনেক বই, ডায়েরি ফুল-পদক, ল্যাপটপ অনেক কিছু পেয়েছে।’’ ল্যাপটপ পেয়ে সবচেয়ে খুশি প্রমীলা। কারণ ল্যাপটপ কেনার কথা ভাবাই সম্ভব ছিল না তাদের পক্ষে। শিক্ষিকা হওয়া তার লক্ষ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement