বাড়ি অসম্পূর্ণ। তাই ত্রিপলের নীচে বাস। ছবি: সঙ্গীত নাগ
প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে নিজের পুরনো বাড়ি ভেঙে কাজ শুরু করেছিলেন রঘুনাথপুর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিশ্বনাথ মেটে। তাঁর দাবি, তিন দফায় মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তিনি পেয়েছেন। তার পর থেকে আর টাকা পাননি। নির্মীয়মাণ বাড়ির পাশেই ছোট্ট এক চিলতে জায়গায় ত্রিপলের নীচেই তাঁর সংসার। একই অভিযোগ শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কমলা বাউরি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিমাই বাউরিদেরও।
রঘুনাথপুর পুরসভা সূত্রের খবর, ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পে বকেয়া না আসায় শহরের ১৩টি ওয়ার্ডে ৪১২টি বাড়ির নির্মাণ মাঝপথে আটকে। পুরপ্রশাসক তথা বিদায়ী পুরপ্রধান তৃণমূলের মদন বরাটের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে ওই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করেছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। মদনবাবু বলেন, ‘‘লকডাউন শুরুর কিছু পরেই দফতর থেকে মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, করোনা অতিমারির কারণে অর্থ সঙ্কট চলছে। তাই ওই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।” পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর পুরসভার ওই প্রকল্পের টাকা কেন আটকে রয়েছে, খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’
তবে এ জন্য পুরসভার বিরুদ্ধে ‘ভ্রান্ত নীতি’ নিয়ে চলার অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের রঘুনাথপুর শহর সভাপতি তারক পরামানিক। তাঁর মতে, ‘‘যাঁর বাড়ি একেবারে ভেঙে পড়েছে এবং যাঁদের খড়ের চালা, তাঁদের পুরসভার আগে টাকা দেওয়া উচিত ছিল। এ ভাবে কাজ করলে যাঁদের আগে বাড়ির প্রয়োজন, তাঁদের এত দিনে ঘর সম্পূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু পুরসভা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ না করে সবাইকেই কিছু কিছু করে কিস্তির টাকা দেওয়াতে এই সমস্যা।’’ পুরসভার সিপিএমের বিদায়ী দলনেতা প্রদীপ দাসের দাবি, ‘‘প্রায় সবাই নিজের বাড়ি ভেঙে সেখানেই নতুন ঘর শুরু করেছিলেন। সম্পূর্ণ টাকা না পেয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।’’
যদিও পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারি নিয়ম মেনে পাঁচ কিস্তিতে উপভোক্তাদের টাকা দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পে দু’টি পর্যায়ে বাড়ি পাওয়ার কথা মোট ৮৮৬ জনের। প্রথম পর্যায়ে বেশির ভাগের বাড়ি তৈরি শেষ হয়েছে। কিন্তু ৪০ জনের বকেয়া আছে। তবে সমস্যা বেশি দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষেত্রেই। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাড়ি পাওয়ার কথা ছিল ৪০০ জনের। তাঁদের মধ্যে ৩৭২ জন উপভোক্তা বাড়ি তৈরির টাকা এখনও সবটা পাননি।
পুরসভা সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। তার মধ্যে রাজ্য সরকার ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা, কেন্দ্রীয় সরকার ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং বাকি ২৫ হাজার টাকা দেবেন উপভোক্তা। দ্বিতীয় পর্যায়ের ৩৭২ জন উপভোক্তার মধ্যে বেশির ভাগই গড়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার বেশি পাননি।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অনিতা বাউরি পরিচারিকার কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘর ভেঙে দেওয়ার পরে বাড়িভাড়া নিয়ে থাকছি। ভেবেছিলাম, কয়েক মাসেই ঘর তৈরি হয়ে যাবে। ছ’মাস ধরে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় সামান্য় রোজগারে বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকাও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” এই অবস্থায় পুরসভার কার্যত করার কিছু নেই বলেই জানাচ্ছেন পুরপ্রশাসক মদন বরাট। তাঁর দাবি, ‘‘বকেয়া টাকার জন্য রাজ্যে তদ্বির করেও লাভ হয়নি।”
এ নিয়ে রাজনৈতিক কাজিয়াও শুরু হয়েছে। তৃণমূলের রঘুনাথপুর শহর সভাপতি বিষ্ণুচরণ মেহেতার অভিযোগ, ‘‘ওই প্রকল্পে কেন্দ্রের বিজেপির সরকার টাকা দেওয়া বন্ধ করাতেই সমস্যা তৈরি হয়েছে।” আর বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাণেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার অনেক আগেই অর্থ বরাদ্দ করেছে। তৃণমূলের রাজ্য সরকার ওই প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে খরচ করে ফেলে, এখন অতিমারির যুক্তি দেখিয়ে টাকা দিতে পারছে না।’’