কবি সারদাপ্রসাদ কিস্কুর মূর্তিতে মালা দিলেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। বৃহস্পতিবার। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
কবি সারদাপ্রসাদ কিস্কুর জন্মদিনে তাঁর নামাঙ্কিত সাহিত্য পুরস্কার বন্ধ থাকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল। সমাজ-মাধ্যমে অনেকে এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। পাশাপাশি, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও পুরস্কার বন্ধ না থাকা নিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। বৃহস্পতিবার মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বোরোর জামতোড়িয়ায় কবির জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তবে বলেন, “কয়েক দিন আগে আমাকে পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তার পরে, এ নিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি। কবি সারদাপ্রসাদ কিস্কুর যে পুরস্কার দেওয়া হয়, তা ২০১৮ থেকে বন্ধ রয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “আমাদের যে কমিটি তৈরি হয়েছে, তাদের নিয়ে বৈঠক ডাকব। এ বছর থেকেই পুরস্কার চালুর জন্য সব রকম চেষ্টা করব।”
বোরো থানার দাড়িকাডোবা গ্রামে জন্ম কবি সারদাপ্রসাদের। জাতীয় শিক্ষকের সম্মান পাওয়া সারদাপ্রসাদ আজীবন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। ডাইনি-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে নির্যাতিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রয়াত হন। কবির জন্মদিন উপলক্ষে ফি বছর ২ ফেব্রুয়ারি সাঁওতালি অ্যাকাডেমির তরফে পুরস্কার দেওয়া হয়। বাম আমলে চালু হওয়া এই পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লক্ষ টাকা। তবে কয়েক বছর ধরে পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
তৃণমূল সরকারের আমলে আদিবাসী জনজাতির বিশিষ্ট মানুষদের নামে পুরস্কার চালু, স্কুল-কলেজের নামকরণের একটা চল দেখা গিয়েছে। যদিও ওই সম্প্রদায়ের মানুষজনের একাংশের অভিযোগ, এই আদিবাসী-প্রীতি আদতে ভোট-রাজনীতির অঙ্গ। কবি-ঘনিষ্ঠ সাহিত্যিক মহাদেব হাঁসদা বলেন, “সারদাপ্রসাদ কেবল সাহিত্যিক নন, সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। সাঁওতালি সাহিত্যের জগতে তিনি অনেক উচ্চে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর নামে পুরস্কার বন্ধ থাকায় সাঁওতাল সমাজ ব্যথিত।” পুরস্কার চালুর পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে তাঁর রচনা সমগ্র প্রকাশ ও মানবাজার ২ ব্লকের সরকারি ডিগ্রি কলেজটি তাঁর নামে করারও দাবি জানান তিনি।
এ দিকে, পুরস্কার দেওয়া বন্ধ নিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের কটাক্ষ, “সারদাপ্রসাদ কিস্কুর মতো মহীয়ান সাহিত্যিকের মর্ম এরা বোঝে না। এরা কেবল এপাং ওপাং ঝপাং বোঝে।” বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গারও অভিযোগ, “এই সরকার খেলা, মেলা নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ওড়াচ্ছে। অথচ জেলার এমন বিশিষ্ট সাহিত্যিকের নামে চালু থাকা পুরস্কার বন্ধ রয়েছে। আদিবাসী-প্রীতি, সবটাই লোক দেখানো।”
মানবাজারের বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর তবে দাবি, “আদিবাসী গুণিজনদের সম্মান রক্ষায় এই সরকার সব সময়ে সচেষ্ট। জয় জোহার মেলা, হুল দিবস, আদিবাসী দিবস উপলক্ষে গুণিজনদের সম্মান জানানো হয়। বাম আমলে এ সব ছিল না।”