Migrant Workers

Migrant workers: গ্রামে আয় কতটা হবে, সন্দিহান বহু শ্রমিকই

জীবিকার সন্ধানে শ্রমিকদের যাতে ভিন্‌-রাজ্যে যেতে না হয়, সে লক্ষ্যে রাজ্যেই তাঁদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের হদিস দিতে চায় রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৪৫
Share:

গত বছর পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার এই ছবি দেখা গিয়েছিল পুরুলিয়ায়। ফাইল চিত্র।

রাজ্য সরকার প্রকল্প তৈরি করে কাজ দিলে ভাল হয়। কিন্তু সে প্রকল্পে উপার্জন কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দিহান পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই। তবে লকডাউনের সময়ে কাজ হারিয়ে ফিরতে হওয়া অনেক শ্রমিকই মনে করছেন, সরকার বাড়ির কাছে আয়ের ব্যবস্থা করলে, উপকারই হবে।

Advertisement

জীবিকার সন্ধানে শ্রমিকদের যাতে ভিন্‌-রাজ্যে যেতে না হয়, সে লক্ষ্যে রাজ্যেই তাঁদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের হদিস দিতে চায় রাজ্য সরকার। সোমবার উত্তরবঙ্গে একটি প্রশাসনিক বৈঠকে তেমনই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর লকডাউন ঘোষণার পরেই পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার নানা বিষয় সামনে আসে। কাজ হারিয়ে হাজার-হাজার পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরে আসেন। নিজেদের এলাকাতেই ওই শ্রমিকদের বিকল্প জীবিকার সন্ধান দিতে মুখ্যমন্ত্রী ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্প ঘোষণা করেন। পুরুলিয়ায় সে প্রকল্পে অনেককে কাজ দেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “একশো দিনের কাজে জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রচুর কাজ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ তবে লকডাউন শিথিল হতে শুরু করার পরেই, আবার অনেক শ্রমিকই ভিন্‌রাজ্যের কর্মস্থলে ফিরেছেন।

বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের শ্যামদাসপুরের বিজয় দে মুম্বইয়ে একটি সোনার গয়নার দোকানের কর্মী। তিনি মঙ্গলবার ফোনে বলেন, “এখানে যা রোজগার করি, তা গ্রামে করা সম্ভব নয়। রোজগার কমে গেলে, সংসার চালানো মুশকিল হবে। তবে সরকার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে কিছু করলে, ভেবে দেখব।’’ ইঁদপুরের হিরাশোল গ্রামের সুমন্ত তন্তুবায় দিল্লির একটি জুতো কারখানায় কাজ করেন। তিনি বলেন, “করোনা-পরিস্থিতিতে গ্রামে ফিরে কাজের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু রোজগার খুবই কম। তাই আবার ফিরে এসেছি। স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা হলে, ভেবে দেখব। তবে নতুন ব্যবসা শুরু করা সমস্যার।’’

Advertisement

পুরুলিয়ার আড়শার বামুনডিহা গ্রামের অজিত মাহাতো বেঙ্গালুরুতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি জানান, মাসে ১২ হাজার টাকা পারিশ্রমিক, সঙ্গে থাকা-খাওয়ার
খরচ জুটে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউনে বাড়ি ফিরেছিলাম। কিন্তু গ্রামে কাজ নেই। থাকলেও, পারিশ্রমিক অনেক কম। তাই বাধ্য হয়ে ফিরে এসেছি।’’ ঝালদা ১ ব্লকের ইলু গ্রামের পাপ্পু কালিন্দী ও রাজ কালিন্দী চেন্নাইয়ে একটি খেলনা তৈরির কারখানায় কাজ করেন। তাঁদের দাবি, ‘‘গ্রামে কাজ বলতে একশো দিনের প্রকল্প। মাটি কাটার কাজ করতে পারব না বলে চেন্নাইয়ে ফিরে এসেছি। একশো দিনের কাজের চেয়ে এখানে বেশি পারিশ্রমিক পাই।’’ বান্দোয়ানের তালপাত গ্রামের মকরচন্দ্র মাহাতো গুজরাতের সুরাতে রং মিস্ত্রির কাজ করেন। তাঁরও বক্তব্য, ‘‘লকডাউনে বাড়ি ফিরেছিলাম। কিন্তু ওখানে কাজ করে তেমন রোজগার কোথায়? এখানে অনেক বেশি মজুরি মেলে।’’

সরকারি প্রকল্পে কী ধরনের সুবিধা মিলবে, সে প্রশ্নও রয়েছে অনেকের। পাত্রসায়রের বেলুটের বাসিন্দা সোমনাথ মোতিলাল ঝাড়খণ্ডের একটি চালকলে কর্মরত। ফোনে তিনি বলেন, “দূরে থাকা তো কষ্টের। তবে এখানে যা রোজগার হয়, তাতেই সংসার চলে। রাজ্য সরকার আমাদের কাজ দেবে, না কি স্বনির্ভর হতে সাহায্য করবে— তা বুঝতে পারছি না। যদি সংসার চালানোর মতো রোজগারের ব্যবস্থা হয়, নিশ্চয় ফিরে যাব।’’ গঙ্গাজলঘাটির গোবিন্দধামের বাসিন্দা, দিল্লিতে কর্মরত সুখেন বাউরিরও বক্তব্য, “গ্রামে হাঁস-মুরগি চাষ করে ব্যবসা করা যায়। তবে তা শুরু করতে বড় আমানত দরকার। রাজ্য সরকার সে সুবিধা করলে, ফেরা যেতে পারে।’’

লকডাউনে বাড়ি আসার পরে, আর কাজের জায়গায় ফিরতে না পারা শ্রমিকেরা মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে আশা দেখছেন। চেন্নাই থেকে গ্রামে ফিরেছিলেন বাঁকুড়ার ইন্দাসের ছোট গোবিন্দপুরের বাসিন্দা হরিসাধন নন্দী। সেখান থেকে আর ডাক না আসায় গ্রামেই একশো দিনের কাজ করছেন তিনি। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আগের মতো রোজগার হচ্ছে না। কাজ পেলে, আবার ফিরে যাব। তবে সরকার রোজগারের দিশা দেখাতে পারলে তো ভালই হয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে আশা জেগেছে।’’ পুরুলিয়ার জয়পুরের বালিভাসা গ্রামের অরুণ মাহাতো ওডিশার ঝাড়সুগদা থেকে লকডাউনে ফিরে আসেন। আর সেখানে কাজ মেলেনি বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় তো তেমন কাজ নেই। চাষবাসের জমিও নেই। আমার মতো অনেকেই রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী যদি এলাকায় কাজের সুযোগ করে দেন, তার চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement